বিজেপিকে ঠেকাতে একই মঞ্চে হাত মিলিয়ে 'ইন্ডিয়া' ব্লক তৈরি করেছিল বিরোধী দলগুলি। তবে সাম্প্রতিককালে সেই জোটে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই আবহে তৃণমূলই যেন পথ দেখাচ্ছে। সেই মতো এবার অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিকে কংগ্রেসের থেকে 'দূরত্ব' তৈরি করতে দেখা গেল। মঙ্গলবার সংসদের বাইরে ইন্ডিয়া ব্লকের সাংসদরা সরকার বিরোধী স্লোগান তুলে, প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিবাদে দেখা গেল না ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম দু'টি বড় দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির একজন সাংসদকেও। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। (আরও পড়ুন: সম্ভলে যেতে চান রাহুল-প্রিয়াঙ্কা, 'বহিরাগত' ভাই-বোনকে আটকাতে কড়া প্রশাসন)
আরও পড়ুন: কোন ৩ নীতি মেনে চিনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ভারত? জানালেন জয়শংকর
এর আগে লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই করেছিল সমাজবাদী পার্টি। রাজ্যে বিজেপির থেকে বেশি আসন পেয়েছিল জোট। তবে এরপর বিধানসভা উপনির্বাচনে একলাই হেঁটে বিপর্যস্ত হয়েছে সমাজবাদী পার্টি। অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা ভোটে একাই লড়েছিল। তবে দিল্লিতে যে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে, সেই বার্তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে রাজ্যে বেশ ভালো ফল হয় তৃণমূলের। তবে এখন তারা কংগ্রেসের 'প্রভুত্ব' মেনে নিতে নারাজ। সংসদে আদানি ইস্যুতে অধিবেশন অচল করার পরিপ্রেক্ষিতে যে কংগ্রেসের পাশে তৃণমূল নেই। অপরদিকে এবার সমাজবাদী পার্টিকেও ইন্ডিয়া ব্লকের প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হতে দেখা গেল না। যা ঘিরে জোর জস্পনা দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। (আরও পড়ুন: বক্তৃতায় বিস্ফোরক শেখ হাসিনা, ইউনুসের নাম করে মারাত্মক দাবি তাঁর)
উল্লেখ্য, গতকাল সংসদের সামনে প্ল্য়াকার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আদানি ইস্যুতে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সংসদরা। সেখানে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, আরজেডি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, বাম দলগুলির সাংসদরা ছিলেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করা হয়। সেখানে রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, আরজেডির মিসা ভারতী এবং উদ্ধবপন্থী শিবসেনার অরবিন্দর সাওয়ান্ত ছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন সাময়িক ভাবে ওয়াকআউট করেছিলেন এই বিরোধী সাংসদরা। তবে তৃণমূল এবং সমাজবাদী পার্টির সাংসদরা রাহুলের নেতৃত্বে সংসদ থেকে বেরিয়ে আসেননি। পরে অবশ্য সম্ভল ইস্যুতে ওয়াকআউট করেছিল সমাজবাদী পার্টি।
এর আগে গত এক সপ্তাহ ধরে সংসদের নিম্নকক্ষ প্রায় অচল হয়ে থেকেছে বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে। এর আগে অবশ্য কুণাল ঘোষ দাবি করেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস চায় না আদানি ইস্যুতে সংসদ অচল হয়ে যাক। তাঁর কথায়, 'আদানি ইস্যুতে নিশ্চিতভাবে সংসদে প্রতিবাদ হবে। তা বলে ওই ইস্যুতে লাগাতার সংসদ অচল করে যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে রাজ্যগুলি নিজেদের বক্তব্য সংসদে রাখবে কীভাবে? ১০০ দিনের কাজ, আবাসের বঞ্চনা নিয়ে বাংলারও কথা বলার আছে সংসদে। শুধু আদানি আদানি করে সংসদের কাজ বন্ধ করলে তো বিজেপিরই লাভ। বিজেপিরই উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে। বিজেপিকে কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না। তাহলে শুধু মুলতবি আর বিক্ষোভ করে কি বিজেপিরই সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে? বাংলাসহ বাকি রাজ্যের দাবিদাওয়াগুলোর তাহলে কী হবে?'
আর গতকাল সম্ভল ইস্যুতে অখিলেশ যাদব সংসদে বলেন, 'এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত সংসদে। পাঁচজন মানুষ সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন। স্পিকার ওম বিড়লা এরপর জানান, জিরো আওয়ারে এই ইস্যুটি উত্থাপন করা যেতে পারে। এরপর অখিলেশের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির সাংসদরা ওয়াকআউট করেন। এদিকে এক সপ্তাহের অচলাবস্থার অবসান ঘটতে পারে সংসদে। সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষ্যে সংসদের দুই কক্ষেই আলোচনায় সম্মত হয়েছে শাসক এবং বিরোধীরা।