সংঘাতের আবহ বজায় থাকলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পূর্ব লাদাখে উত্তেজনা খানিকটা কমল। দু'জন উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, তিনটি জায়গা থেকে নিজেদের সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে চিন। একইভাবে সেই এলাকাগুলি থেকে নিজেদের বাহিনীকে পিছিয়ে এনেছে ভারত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গালওয়ান উপত্যকার প্যাট্রলিং পয়েন্ট ১৫ ও হট স্প্রিং অঞ্চল বরাবর ‘সীমিত সামরিক অব্যাহতি’ হয়েছে। নিজেদের সাঁজোয়া গাড়ি ও বাহিনীকে ওই এলাকাগুলি থেকে দু'তিন কিলোমিটার পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছে বেজিং। দ্বিতীয় আধিকারিক বলেন, ‘এটা আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পথে একটি ধাপ (গত এপ্রিলের শুরুতে যেমন ছিল)। ওই এলাকাগুলির সামনের দিকের অংশ থেকে ভারতীয় জওয়ানদেরও সরিয়ে আনা হয়েছে।’
গত সোমবার ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ প্রথম জানায়, পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার একেবারে কাছে চুসুল-মলডো এলাকায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের সাত ঘণ্টা বৈঠকের পর তিনটি এলাকায় উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। সেই বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ১৪ কর্পের লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং। অন্যদিকে চিনের তরফে ছিলেন মেজর জেনারেল লিউ লিন। যিনি দক্ষিণ জিনজিয়াং সামরিক এলাকার কম্যান্ডার।
নাম গোপন রাখার শর্তে তৃতীয় এক সেনা আধিকারিক জানান, যেখানে থেকে এবার যাবতীয় উত্তেজনা-দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, সেই প্যাংগং সো লেকেও উত্তাপ কমছে। তবে ‘এখানে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে’ বলে জানিয়েছেন ওই সেনা আধিকারিক।
উত্তেজনা আরও কমিয়ে আনতে আগামিদিনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও চিনের মধ্যে একাধিক বৈঠকের পরিকল্পনা হয়েছে। তার মধ্যে আজ, বুধবার গালওয়ান এলাকার ১৪ প্যাট্রলিং পয়েন্টে একটি মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে। গত ৫-৬ মে হাতাহাতির মধ্যে দিয়ে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তার প্রশমনে এটি মেজর জেনারেল পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠক হতে চলেছে। দ্বিতীয় আধিকারিক বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা সমাধানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিভিন্ন এলাকায় কর্নেল এবং ব্রিগেডিয়াররাও চিন সেনার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন। কৌশলগত ক্ষেত্রে হটলাইন নম্বরও চালু আছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্ত বরাবর তিনটি সংঘাতের জায়গা বা হটস্পট থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। নর্দান আর্মির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিএস হুডা (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, ‘তিনটি এলাকায় উত্তেজনা হ্রাস পাওয়া ভালো লক্ষণ, যেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার লাইন নিয়ে বিতর্ক নেই। আমরা এখন উত্তর প্রান্তে প্যাংগং সো'তে সমস্যার সমাধান করতে পারব।’
গত মাসের শুরুতে সীমান্তের তিনটি এলাকায় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। যে এলাকাগুলি ভারতীয় সেনার প্য়াট্রলিং পয়েন্ট ১৪, ১৫ এবং ১৭ হিসেবে চিহ্নিত। ১৪ নম্বর পয়েন্টে কারাকোরাম পাসের দক্ষিণে শেষ ভারতীয় সামরিক পোস্টে দৌলত বাগ ওল্ডিতে বাহিনী পাঠানোর জন্য একটি ছোটো নদীর উপর ভারত যে ৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ তৈরি করেছিল, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বেজিং। নাম পোগন রাখার শর্তে এক সরকারি আধিকারিক জানান, ১৪ নম্বর পয়েন্ট থেকে সরে গিয়েছে চিনা সেনা।
পনেরো নম্বর পয়েন্টে দু'দেশের সেনা কার্যত মুখোমুখি সংঘাতে অবতীর্ণ হয়েছিল। দু'পক্ষই তাঁবু খাটিয়ে সেখানে ছিল। ওই সরকারি আধিকারিক বলেন, ‘এখানে দু'পক্ষই নিজেদের উপস্থিতি কম করছে।' অন্যদিকে, ১৭ নম্বর পয়েন্টে সমরাস্ত্র ও সেনা নিয়ে দু'দেশের সেনা মুখোমুখি ছিল। ওই আধিকারিক জানান, সেখানে আপাতত সাঁজোয়া গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাহিনীও সরে যাবে। এমনকী প্যাংগং সো লেকেও ১৫ টি নৌকা এবং ১২৪ টি গাড়ি সরিয়ে নিয়েছে বেজিং।