ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার-সহ কানাডার ছয় কূটনীতিবিদকে বহিষ্কার করে দিল ভারত। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ডেডলাইনও। সোমবার রাত ৯ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, আগামী ১৯ অক্টোবর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে কানাডার ছয় কূটনীতিবিদকে ভারত ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ ভারত ছাড়ার জন্য তাঁদের ১২২ ঘণ্টার মতো সময় দেওয়া হয়েছে। কোন ছয়জনকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, সেটার তালিকাও দিয়েছে সাউথ ব্লক। ওই তালিকা অনুযায়ী, ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস উইলার, ডেপুটি হাইকমিশনার প্যাট্রিক হেবার্ট, ফার্স্ট সেক্রেটারি মেরি ক্যাথরিন জলি, ফার্স্ট সেক্রেটারি ইয়ান রস ডেভিড ট্রাইটস, ফার্স্ট সেক্রেটারি অ্যাডাম জেমস চুইপকা এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি পাবুল অরজুয়েলাকে বহিষ্কৃত করে দেওয়া হয়েছে।
'দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জমাট বেঁধে গিয়েছে'
আর এস জয়শংকররা যে পরপর কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটছেন, তাতে অবাক নয় সংশ্লিষ্ট মহল। ভারত সরকারিভাবে কানাডার ছয় কূটনীতিবিদকে বের করে দেওয়ার আগে বৈদেশিক বিষয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ রবিন্দর সচদেব বলেন, 'কানাডার মতো একটা দেশের এটুকু বোধবুদ্ধি থাকা উচিত যে ভারত এরকম প্রতিক্রিয়া দেবে। দু'দেশের সম্পর্ক এখন পুরোপুরি শীতল হয়ে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ওখানে (কানাডা) এখন কূটনীতিবিদদের রাখার কোনও দরকার নেই।'
ভোট আসতেই চালবাজি?
ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকেছিল, সেটা খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের (ভারত জঙ্গি বলে চিহ্নিত করেছে আগেই) হত্যার ঘটনা নিয়ে জাস্টিন ট্রুডোর মন্তব্যের পরে। নিজ্জরের হত্যার ঘটনায় ভারতের যোগ থাকতে বলে গত বছর সেপ্টেম্বরে অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। যে অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল ভারত। আর সেইসঙ্গে গত এক বছরে বারবার বলে এসেছে যে প্রমাণ দেওয়া হোক নয়াদিল্লিকে। সেই প্রমাণ অবশ্য দিতে পারেনি ট্রুডো সরকার।
কিন্তু ভোট এগিয়ে আসতেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়েন ট্রুডোরা। কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সঞ্জয় বর্মা-সহ কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিবিদকে একটি মামলার তদন্তে ‘পারসন অফ ইন্টারেস্ট’ করা হয়। সূত্রের খবর, সেই পদক্ষেপের মাধ্যমে জঙ্গি নিজ্জরের মামলায় তাঁদের কাছে কোনও তথ্য থাকতে পারে বলে দাবি করে কানাডা।
ইট ছুড়েছিল কানাডা, পাটকেল ফিরিয়ে দিল ভারত
আর সেই পদক্ষেপের তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করে নয়াদিল্লি। প্রাথমিকভাবে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। তলব করা হয় ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস উইলারকে। কানাডা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার-সহ ‘টার্গেট’ হওয়া কূটনীতিবিদকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা করা হয়।
আর তারপর ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার-সহ ছয় কূটনীতিবিদকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখন যা পরিস্থিতি হল, তাতে ভারতে নিযুক্ত কানাডার পরবর্তী স্থায়ী হাইকমিশনার হিসেবে ক্রিস্টোফার কুটারকে ছাড়পত্র দেবে না। যে পদটা গত জুন থেকে ফাঁকা পড়ে আছে।