বৃহস্পতিবার কোয়াড বৈঠকে বসছে আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান। রাশিয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা।
ইন্দো-প্যাসিফিক ভূ-রাজনীতি মাথায় রেখে তৈরি হয়েছিল কোয়াড। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা যোগ দিয়েছে এবং এই কোয়াড নিয়ে চিন বরাবর অসন্তুষ্ট। সাম্প্রতিককালে কোয়াডের যৌথ নৌ-মহড়া নিয়েও চিন তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু সেই কোয়াডের মধ্যেও কি এবার বিভাজনের সম্ভাবনা তৈরি হল? সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট সেই কূটনৈতিক সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না।
ইউক্রেন নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে এখনও পর্যন্ত দুটি ভোট হয়েছে। শেষ ভোটাভুটি হয়েছে, গত বুধবার। সেখানে ভারত কোনওপক্ষেই ভোট দেয়নি। কূটনৈতিক ভাষায় যাকে অ্যাবস্টেন করা বলে। বস্তুত চিনও ওই ভোটে অ্যাবস্টেন করেছে। এর আগেও ভারত একই অবস্থান নিয়েছিল।
ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রথমবার আমেরিকা বিশেষ মাথা ঘামায়নি। তারা জানিয়েছিল, ভারতের এই অবস্থানের জন্য ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হবে না। অন্যদিকে রাশিয়া ভারতের অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু বুধবারও ভারত একই অবস্থান নেওয়ায় প্রকাশ্যেই খানিক উষ্মাপ্রকাশ করেছে আমেরিকা। মার্কিন কূটনীতিবিদ ডোনাল্ড লু প্রকাশ্যেই বলেছেন, আমেরিকা চায় ভারত ইউক্রেন সংকটে স্পষ্ট অবস্থান নিক। কিন্তু ভারত তা নিচ্ছে না।
লুয়ের বক্তব্য, ‘ভারত কূটনৈতিকভাবে সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছে। সে কারণেই একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চাইছে। আমেরিকা এবং রাশিয়া দু’জনের সঙ্গেই সমদূরত্ব এবং সম-সম্পর্ক রক্ষা করতে চাইছে।' কেন ভারত এই অবস্থান নিচ্ছে? মার্কিন কূটনীতিকের ধারণা, ইউক্রেনে আটকে থাকা ১৮ হাজার ভারতীয়কে ফেরানোর তাগিদ থেকে ভারত এ কাজ করতে পারে। একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনীতির কথাও মাথায় রাখছে ভারত।
নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এক অফিসার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ইউরোপের একাধিক দেশ এবং আমেরিকা অনেক আগেই ইউক্রেন থেকে তাদের নাগরিকদের তুলে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ভারত সেই সময় যথেষ্ট সচেতন হয়নি বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে। ভারতের যে নাগরিকরা ইউক্রেনে আটকে ছিলেন বা এখনও আছেন, তাঁদের একাংশ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। বিরোধীরাও ক্রমশ সরব হচ্ছে। ভোট মরশুমে তাই আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিজেপি সরকার। তারা বুঝতে পেরেছে, পূর্ব ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের বের করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাহায্য প্রয়োজন। পুকিনের সঙ্গে এক সপ্তাহে দু'বার ফোনে কথা বলেছেন মোদী। পুতিন সেফ প্যাসেজের আশ্বাস দিয়েছেন।
নাগরিকদের উদ্ধারের বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ তা মানছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অভ্র ঘোষ। তবে একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, স্পষ্ট অবস্থান না নিয়ে ভারত সুদূর ভূ-রাজনীতির কূটনীতির দরজাও খোলা রাখছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের গোলমাল নিয়ে আমেরিকা। যেমন - ধরি মাছ না ছুঁই জল অবস্থান নেয়, ভারতও সংকটকালে সেই অবস্থান নিয়ে আমেরিকাকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। চিনের সঙ্গে ভারতের সমস্যা হলে রাশিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। সে কথাটিও ভারতকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। বস্তুত, উপমহাদেশে ভারত এখন নানা সমস্যার মধ্যে আছে। চিন, পাকিস্তানের সঙ্গে একের পর এক ঝঞ্ঝাট চলছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে পুরোপুরি চটাতে চাইছে না ভারত। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া চিনের সঙ্গে হাত মেলালে ভারতের নিরাপত্তার সংকট আরও বাড়বে।
প্রশ্ন উঠছে, কোয়াডে ভারতের বাকি তিন পার্টনারই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। কূটনৈতিক ব্লক এখন কার্যত দু'ভাগে বিভক্ত-- রাশিয়ার পক্ষে অথবা বিপক্ষে। ভারতের অবস্থান কি কোয়াডের বাকি সদস্যরা রাশিয়ার পক্ষে হিসেবে দেখবে? সেক্ষেত্রেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের চাপ বাড়বে। ফলে এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী বলেন, তার দিকে তাকিয়ে আছে কূটনৈতিক মহল।
তবে সরকারিভাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, কোয়াড বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয় ইন্দো-প্যাসিফিক কূটনীতি। অর্থাৎ, ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারত যে এই বৈঠকে কথা বলতে চাইছে না, তা খানিকটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আবার এই বৈঠকের আগেই গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কূটনীতিবিদের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, আমেরিকা চাইছে কোয়াডেও রাশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনতে।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)