কয়েক সপ্তাহ আগেই চিন সফরে গিয়েছিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। এরপর নিজের দেশে ফিরেই ভারত বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই সব মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন মলদ্বীপের 'জুমহোরি পার্টি'র নেতা কাসিম ইব্রাহিম। ভারতের বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য করলে মলদ্বীপের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন কাসিম। এই বিষয়ে কাসিম বলেন, 'কোনও দেশের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার আগে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে নিজেদের দেশের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে বাজে কথা বললে তা আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে। সেই কথা বুঝেই এর আগে সোলিহ ইন্ডিয়া আউট প্রচরাভিযানকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞা তো বাতিল করা হয়নি। এটা করা ঠিকও হবে না। এটা আমাদের দেশেরই ক্ষতি ডেকে আনবে। আর তাই বলছি, চিন থেকে ফিরে মুইজ্জু যে সব মন্তব্য করেছেন, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে প্রেসি়ডেন্টের ক্ষমা চাওয়া উচিত।' (আরও পড়ুন: ছুরিকাঘাত মলদ্বীপের প্রসিকিউটার জেনারেলকে, আগের ভারতপন্থী সরকার নিয়োগ করে তাঁকে)
এদিকে কয়েকদিন আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন সেদেশের তিন মন্ত্রী। এই আবহে তিনজনকেই পদ খোয়াতে হয়েছে। তবে এই ঘটনার জেরে মলদ্বীপকে বয়কটের ডাক ওঠে ভারতে। এক সময়ে মলদ্বীপে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক যেত ভারত থেকে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য দেখা যায়, সেদেশে ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা এতটাই কমেছে যে তালিকায় প্রথম পাঁচের মধ্যেই নেই ভারত।
জানা যাচ্ছে, শীঘ্রই মুইজ্জুকে পদচ্যুত করতে মলদ্বীপের সংসদে প্রস্তাব পেশ হতে পারে। সেদেশে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করার প্রস্তাব পেশ করতে যত সই প্রয়োজন, তা নাকি জোগাড় করে ফেলেছে মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা এমডিপি। প্রসঙ্গত, বর্তমানে মলদ্বীপ সংসদে বিরোধী এমডিপি সংখ্যাগরিষ্ঠ। কয়েকদিন আগেই মলদ্বীপের সংসদে এমডিপি এবং শাসক পিএনসি-র সাংসদদের হাতাহাতির ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে মলদ্বীপের। একদা বন্ধু মলদ্বীপ এখন ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মেডিক্যাল ইমারজেন্সির ক্ষেত্রে মলদ্বীপকে সাহায্য করতে ভারতের তরফ থেকে সেই দেশকে দু'টি হেলিকপ্টার এবং একটি বিমান দেওয়া হয়েছে। তবে সেই বিমান ও হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্যে সেদেশে ভারতের প্রায় ৮০ জন সামরিক সদস্য আছেন। ভারতের এই সামরিক কর্মীদের মলদ্বীর ছাড়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে বসে আছেন মুইজ্জু। এরই মধ্যে ভারতের দেওয়া বিমান ব্যবহার করতে অস্বীকার করায় সম্প্রতি সে দেশে এক শিশুর মৃত্যু হয়। যা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল মুইজ্জু সরকারকে। এদিকে চিন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মুইজ্জু নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই দাবি জানিয়ে এসেছেন, ভারতীয় সেনাদের মলদ্বীপ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনে জিতে যাওয়ার পরও তিনি সেই দাবি তুলে ধরেছিলেন। আর সম্প্রতি চিন সফর থেকে নিজের দেশে ফিরেই ভারতীয় সেনা জওয়ানদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি।
মুইজ্জুর পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস ইসলামি কট্টরপন্থার নীতি মেনে রাজনীতি করে। এই আবহে গতবছরের চিন সফর সেড়ে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেই ভারতকে তোপ দেগেছিলেন মুইজ্জু। ভারতের নাম না করেই তিনি বলেছিলেন, 'যে কেউ মলদ্বীপকে এসে বকাঝকা করে যেতে পারে না। আমরা এই সাগরের ছোট দ্বীপ হতে পারি, কিন্তু আমাদেরও প্রায় ৯ লাখ বর্গ কিমির অর্থনৈতিক জোন রয়েছে। এই সমুদ্র কোনও এক নির্দিষ্ট দেশের নয়।' এই সবের মাঝেই আবার রিপোর্টে দাবি করা হয়, ভারত সফরে আসতে চেয়েছিলেন মুইজ্জু। তবে দিল্লি তাতে আগ্রহ দেখায়নি। এই কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মুইজ্জুর গদি বেশ টালমাটাল।