প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এল নিনো আসতে পারে। আর তা হলেই এবারে ভারতে বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হবে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। ভারতের কৃষি এখনও অনেকটাই বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। তাই এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টি কম হলে, আসন্ন অর্থবর্ষে কৃষি উত্পাদন মার খেতে পারে। আরও সমস্যায় পড়তে পারেন কৃষিজীবিরা। শুধু তাই নয়, বাজারে জোগানের অভাবে দাম বাড়তে পারে খাদ্যমূল্যের। জানুয়ারি মাসের অর্থনৈতিক পরিচালনায় এমনটাই উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু এই এল নিনো কী, তা জানেন?
এল নিনো
'এল নিনো' একটি স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ 'যীশুর ছেলে'। কেন? কারণ সাধারণত বড়দিনের পর, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই তার দেখা মেলে। কিন্তু জিনিসটা কী?
প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে এনসো চক্রের দু'টি বিপরীত অবস্থা হল এল নিনো ও লা নিনা। লা নিনা দ্বারা এনসো ইভেনের শীতল অবস্থা এবং এল নিনো দ্বারা উষ্ণ অবস্থা বোঝানো হয়।
কোনও কোনও বছর(সম্ভবত এবারের মতো) পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরেরে পেরু ইকুয়েডর উপকূল বরাবর দক্ষিণ মুখী উষ্ণ সমুদ্র স্রোত দেখা যায়। এরই পোশাকি নাম এল নিনো। গড়ে প্রায় ৪ বছর অন্তর এল নিনো আসে। আরও পড়ুন: ক্রমেই গরম হচ্ছে পৃথিবী, কী করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে? Report
এই এল নিনোর সঙ্গে মৌসুমী বায়ুর কিন্তু গভীর সম্পর্ক আছে। তার আগে জানুন সাধারণ অবস্থায় কী হয়:
১. এই সময়ে উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কাছাকাছি অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে উচ্চচাপ থাকে। বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপে যাত্রা করে।
২. ভারত মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী মহাসাগরগুলির তুলনায় এই জল গরম। ফলে তুলনামূলকভাবে কম চাপ থাকে এই অঞ্চলে। ফলে স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই আর্দ্র বাতাস পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের থেকে ভারত মহাসাগরের দিকে ছুটে চলে যায়।
৩.ভারত মহাসাগরের তুলনায় ভারতের স্থলভাগের উপর চাপ কম থাকে। আর তাই আর্দ্রতা-ভরা বাতাস সমুদ্র থেকে স্থলভাগে চলে যায়। বৃষ্টি হয়।
এল নিনো এলে কী হয়?
এল নিনোর বছরে পেরুর উপকূলের সমুদ্র পৃষ্ঠ শীতল হওয়ার বদলে উষ্ণ হয়ে যায়। জল যখন গরম হয়, তখন সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এদিকে বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপে যাত্রা করে।

ছবিতে এল নিনো। সৌজন্যে: Facebook
(Facebook)এর ফলে সাধারণ ট্রেড উইন্ডেরও দিক ঘুরে যায়। উল্টো দিকে বইতে শুরু করে। আর্দ্রতা-বোঝাই বাতাস পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর(উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী অঞ্চল) থেকে পেরুর উপকূলের দিকে ছুটে আসে। ফলে এল নিনোর বছরে পেরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়।
এই একই সময়ে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে এবং এশিয়ার বাইরের জলভাগ শীতল হয়ে যায়। এর ফলে ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ চাপ বৃদ্ধি পায়।
ফলে এল নিনোর বছরে ভারতে মৌসুমী বায়ুর দ্বারা বৃষ্টিপাত অনেকটাই হ্রাস পায়।
এর আগে ২০১৫ সালে খুব গরম পড়েছিল। সেই সময় থেকেই সকলে এল নিনোর বিষয়ে চর্চা শুরু করেন।
অর্থাত্, এক কথায় এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে, এল নিনো কার্যকর হলে, ২০২৩ সালে বেশি গরম পড়তে পারে। গ্রীষ্ণ দীর্ঘ হবে এবং বর্ষায় তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বেশ কিছু আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা চলতি বছর ভারতে এল নিনো এফেক্টের পূর্বাভাস দিয়েছে। যদি এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মিলে যায়, তাহলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঘাটতি হতে পারে। ফলে কৃষি উৎপাদন কম হবে। কৃষি উত্পাদন যত কম হবে, দামও বাড়বে খাদ্যদ্রব্যের।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর জন্মের পর থেকে সবচেয়ে বেশি গরম! গত ৮ বছরের রেকর্ড চমকে দিচ্ছে সবাইকে
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup