গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে এখানেই আছেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে ভারত থেকে তাঁর কোনও বক্তব্য শোনা যায়নি সেভাবে। তাঁর হয়ে ছেলে ওয়াজেদ সজীব জয় বক্তব্য পেশ করছিলেন। তবে বিগত দিনে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বিবৃতি দিচ্ছেন ভারতে বসেই। ঢাকায় থাকা ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে তিনি সরব হয়েছেন বিভিন্ন ইস্যুতে। আর এই বিষয়টি নাকি ভারত সরকার পছন্দ করছে না। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে এমনটাই জানালেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। বিক্রমের কথায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ওপর বেশি জোর রয়েছে ভারতের। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে সংসদে প্রশ্ন ওয়াইসির, জবাবে জয়শংকর শোনালেন 'আশার কথা')
আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশি পাগল... লুঙ্গির পিছনে আগুন', আরাকান আর্মি নিয়ে বিস্ফোরক তথাগত
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে 'কুকুর' আখ্যা দিলীপ ঘোষের! বললেন - 'ভিখিরিদের আশ্রয় ফুটপাতে'
বিক্রম মিশ্রি জানান, শেখ হাসিনা নিজের ব্যক্তিগত কমিউনিকেশনস ডিভাইস ব্যবহার করে রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন। ভারত সরকার কোনও ভাবে সেই সব মন্তব্যের সঙ্গে যুক্ত নয় বা সেই সব মন্তব্য করার জন্যে কোনও প্ল্যাটফর্মও ভারত সরকার তাঁকে দেয়নি। এদিকে বিক্রম জানান, ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন তিনি। দিল্লি যে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট করে ঢাকাকে জানিয়েছেন বিক্রম। এই আবহে বাংলাদেশ সরকার যে হিন্দুদের ওপর হামলার সব ঘটনা স্বীকার করছে না, তা নিয়ে ভারত সরকার এখনও চিন্তিত। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেটির প্রশংসা করেন বিক্রম। (আরও পড়ুন: সেন্ট মার্টিনের ঘুম উড়িয়েছে আরাকান আর্মি, বাংলাদেশে বাড়বে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ?)
আরও পড়ুন: ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কতটা জানেন? কী হাল পাকিস্তানের?
আরও পড়ুন: হাতছাড়া হবে ফেনি? কলকাতা দখলের ডাক দেওয়া বাংলাদেশ এখন নিজেই আতঙ্কে কাঁপছে!
এদিকে আজ বাংলাদেশ নিয়ে লোকসভায় এস জয়শংকর বলেন, 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা আমাদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ওপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সম্প্রতি ভারতের বিদেশ সচিব ঢাকা সফর করেন। তাঁর বৈঠকে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা আশা করছি যে বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ব্যবস্থা নেবে যাতে সেখানকার সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকে।' (আরও পড়ুন: বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাংলাদেশিদের খোঁজ পুলিশের! একদিনেই চিহ্নিত ২০ অনুপ্রবেশকারী)
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।