রেজাউল লস্কর
লাদাখ সেক্টরে সংঘাতের এলাকাগুলিতে স্থিতাবস্থা ফেরানোর বিষয়ে চিনকে চাপ দিচ্ছে ভারত। তারই অঙ্গ হিসেবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সরানোর প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও এক দফা কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনায় বসতে চলেছে ভারত ও চিন।
নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সপ্তম কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের আগে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে পারে ওয়ার্কিং মেকানিজন ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোর্ডিনেশন (ডব্লুউএমসিসি)। তবে এখনও বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব দু'দেশের কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমান্তরালভাবে ডব্লুউএমসিসির বৈঠকও দ্রুত হতে পারে।’ সে বিষয়ে অবশ্য বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।
গত ২১ সেপ্টেম্বর মলডোয় ১৩ ঘণ্টার বেশি চলা ষষ্ঠ কমান্ডার বৈঠকে সেনা সরানোর বিষয়ে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। প্রায় ৫০ দিন পর দু'দেশের কমান্ডারদের বৈঠকের পর অবশ্য যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়েছিল। সেই দুর্লভ যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও জওয়ান পাঠাবে না কোনও দেশ এবং একতরফাভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পরিবর্তনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকবে দু'দেশ।
সাউথ ব্লকের তরফে সেই যৌথ বিবৃতিকে দু'দেশের ‘প্রতিজ্ঞা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সরানোর বিষয়ে দু'দেশের প্রতিজ্ঞা’-কে তুলে ধরছে সেই বিবৃতি। তিনি আরও জানান, সেনা সরানোর প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। কারণ দু'দেশের জওয়ানরা সাধারণত যে চৌকিতে থাকেন, তাঁদের আবার সেখানে মোতায়েন করতে হয়।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চিনের প্রস্তাবের পরিবর্তে সব সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে সম্পূর্ণ সেনা সরানোর দাবিতে অটল থাকবে নয়াদিল্লি। গত এপ্রিলের আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যে অবস্থা ছিল, তা ফিরিয়ে আনার উপর জোর দেওয়া হবে, যাতে পুরোপুরি সেনা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চিন আবার সেনা সরানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ তীরের কৌশলগত উচ্চতা থেকে ভারতকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে বেজিং। যে দাবি খারিজ করে দিয়েছে ভারত।
বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রাজীব ভাটিয়া জানান, পঞ্চম মাসে পড়েছে দু'দেশের সংঘাত। তারইমধ্যে শীত এগিয়ে আসায় দু'দেশের সেনার লক্ষ্য হল, এই পরিস্থিতিতে নতুন করে উত্তেজনার তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও স্বস্তি বোধ করছি যে দু'পক্ষই নতুন করে উত্তেজনা আটকাতে, স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করতে এবং আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। দু'পক্ষের রাজনৈতিক স্তরেও একইরকম বার্তা দেওয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। যা বোঝাচ্ছে সশস্ত্র দ্বন্দ্বের প্রশ্নেই ওঠে না এবং শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনাই হল এগিয়ে যাওয়ার উপায়। যদিও চিনের তরফে সেই বার্তা দেওয়ার বিষয়টি কিছুটা কম স্পষ্ট।’