শিশির গুপ্ত
কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে কানাডার মন্তব্য যে ভালোভাবে নেওয়া হয়নি, তা আগেই স্পষ্ট করেছে ভারত। তারই রেশ ধরে দু'দেশের বিদেশ কার্যালয়ের মধ্যে যে আলোচনার হওয়ার কথা ছিল, তা ওটাওয়াকে স্থগিত রাখতে বলেছে নয়াদিল্লি। ওয়াকিবহল মহলের মতে, দু'দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক যে ধাক্কা লেগেছে, তা এই পদক্ষেপ থেকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) কানাডার প্রতিনিধির সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাসের সেই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, যে তারিখ ঠিক করা হয়েছে, তা ভারতের পক্ষে অসুবিধাজনক। একই কারণে গত সপ্তাহে করোনা সংক্রান্ত মন্ত্রী সমন্বয় গোষ্ঠীর বৈঠকও এড়িয়ে গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল তৈরির জন্য যে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন কানাডার বিদেশমন্ত্রী ফ্রান্সোয়া ফিলিপ শ্যাম্পেন। আগে সেই গোষ্ঠীর বৈঠকে যোগ দিলেও ‘সূচির’ কারণ দর্শিয়ে গত ৭ ডিসেম্বরের বৈঠক এড়িয়ে যায় নয়াদিল্লি।
গুরু নানকের ৫৫১ তম জন্মবার্ষিকীতে ভার্চুয়াল আলোচনায় কৃষক বিক্ষোভকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সঙ্গে বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার রক্ষার জন্য সর্বদা পাশে থাকবে কানাডা।’ ট্রুডোর সেই মন্তব্য একেবারেই ভালো চোখে দেখেনি নয়াদিল্লি। ‘অযাচিত’ মন্তব্যের জন্য ভারতে কানাডার হাই কমিশনকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কূটনৈতিকভাবে বলা হয়েছিল, ‘ভারতীয় কৃষকদের নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং কানাডার কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন সাংসদের মন্তব্য আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।’ একইসঙ্গে কানাডার হাই কমিশনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল যে ‘কানাডায় আমাদের হাই কমিশন এবং কনস্যুুলেটের সামনে উগ্রবাদী কাজকর্মে উৎসাহ’ প্রদান করেছে সে দেশের নেতাদের মন্তব্য। যা ‘সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেছে।’
তবে ভারতীয় কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সম্পর্ক ধাক্কা খেলেও সেই রেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কে পড়বে না। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই কূটনীতি এবং অর্থনীতির থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে কানাডার নেতৃত্ব। যে দেশে ১৬ লাখের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূতের বাস। তাঁদের মধ্যে সাত লাখ মানুষ আবার শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত।