খোঁজ নেই ২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রী মাসুদ আজহার ও তার পরিবারের। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে পাকিস্তানের এই দাবির সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত হল ভারত।
গত অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতি আর্থিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফএটিএফ-কে ইসলামাবাদ জানায় যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় থাকা ১৬ জন আন্তর্জাতিক স্তরে চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে সাত জনের ‘মৃত্যু হয়েছে’। বাকি জীবিত ৯ জনের মধ্যে ৭ জন আর্থিক ও ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে বোধদয়? হাফিজ সইদকে সাড়ে ৫ বছরে জেলের সাজা শোনাল পাকিস্তানের আদালত
এই তালিকায় রয়েছে লস্কর-ই-তৈবা প্রধান হাফিজ সঈদ, লস্কর-এর অর্থনৈতিক মদতদাতা ও সদস্য হাজি মহম্মদ আশরফ, জাফর ইকবাল, হাফিজ আবদুল সালাম ভুট্টাভি, ইয়াহিয়া মহম্মদ মুজাহিদ ও আরিফ তাসমানি। এ ছাড়া রয়েছে আল কায়দার অর্থনৈতিক সাহায্যকারী আবদুল রহমান। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যক্তিগত ও সংস্থাগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞাও।
গত অক্টোবরে এফএটিএফ-এর বৈঠকে রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইমরান খান সরকারের তরফে ফের জানানো হয়, মাসুদ আজহার ও তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।মনে করা হচ্ছে, প্যারিসে এফএটিফ-এর আগামী বৈঠকে ফের মাসুদ আজহার সম্পর্কে নিখোঁজ তত্ত্বই পেশ করবে পাকিস্তান। কিন্তু তার যুতসই জবাব দিতে ভারত যে প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে, তা জানা গিয়েছে সূত্র মারফত্। বৈঠকে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধানের সঠিক ঠিকানা সম্পর্কে তথ্য পেশ করবে দিল্লি।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস মদতে দণ্ডিত হাফিজ সইদের শাস্তি কার্যকর করা নিয়ে সংশয়
সূত্র মারফত্ জানা গিয়েছে, বর্তমানে ইসলামাবাদ থেকে ১০ কিমি দূরে রাওয়ালপিন্ডির চাকশাহাজাদ শহরে আইএসআই-এর নিরাপদ আশ্রয়ে সপরিবারে বসবাস করছে ২০০১ সালের সংসদ হামলা এবং পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান হত্যার মূল যড়যন্ত্রী মাসুদ আজহার।
শুধু তাই নয়, মুম্বই হামলায় মাসুদের সহ-ষড়যন্ত্রী জাকির উর রহমান লখভিকেও যে বারমা শহরে আইএসআই নিজের ঘাঁটিতে লুকিয়ে রেখেছে, সে তথ্যও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফাঁস করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত। বলা বাহূল্য, কুখ্যাত এই সন্ত্রাসবাদী নেতাকেও ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা করেছে পাক সরকার।প্যারিসে এফএটিফ বৈঠকে ২৬/১১ মুম্বই হামলার আর এক প্রধান ষড়যন্ত্রী জামাত-উদ-দাওয়া সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সঈদ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করার পরিকল্পনা করেছে ভারত। তার বিরুদ্ধে লাহোর আদালতের কারাদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে সন্ত্রাসবাদী নেতা আবেদন করতে পারে বলেও এফএটিএফ-কে সতর্ক করতে উদ্যোগী দিল্লি।
আরও পড়ুন: FATF-এর 'ধূসর তালিকা' থেকে বেরোতে পারে পাকিস্তান, চিন্তা বাড়বে ভারতের
রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহার সম্প্রতি তার ভাই রউফ আজগরের হাতে জইশ-ই-মহম্মদ পরিচালনার জায়িত্ব অর্পণ করেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে নারাজ ইমরান খান সরকার। গোয়েন্দাসূত্রে খবর, ৫ অগস্ট ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং ওই রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার পরে উপত্যকায় হিংসা ছড়াতে প্রায় ১০০ সন্ত্রাসবাদীকে কাজে নামিয়েছে রউফ।
এফএটিএফ বৈঠকে আমেরিকার সমর্থন পেয়ে এ যাত্রায় কালো তালিকায় নাম ওঠা রোখার সম্ভাবনা থাকলেও সন্ত্রাস দমনে পাক সরকার যে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না করে ভুয়ো তথ্যের নীচে জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে, তা প্রমাণ করতে কোমর বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার।