গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২-এর র্যাঙ্কিং প্রত্যাখ্যান করল কেন্দ্র সরকার। একে দেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বলে অবিহিত করা হয়েছে। শনিবার বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে খারাপ অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় এমনই বিবৃতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। সেখানে বলা হয়েছে, শিশু অপুষ্টি ও মাত্র ৩,০০০ জনের উপর চালানো 'মতামত ভোটে'র উপর ভিত্তি করে সমগ্র ভারতের জন্য পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।
গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২-এ ভারতকে ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭তম র্যাঙ্কিং দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা আরও ৬ ধাপ পিছিয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের থেকে পিছিয়ে ভারত। ভারতের স্কোর ২৯.১। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এর প্রকাশক কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং ওয়েলট হাঙ্গার হিলফে এই ক্ষুধার মাত্রাকে 'গুরুতর' হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড হল আয়ারল্যান্ডের একটি NGO। অন্যদিকে ওয়েলট হাঙ্গার হিলফে হল জার্মানির এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
প্রতিবেশী পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং মায়ানমার যথাক্রমে ৯৯, ৬৪, ৮৪, ৮১ এবং ৭১ স্থানে রয়েছে। সবাই ই ভারতের উপরে রয়েছে। অর্থাত্ যেই দেশে আপদকালে চাল-গম পাঠিয়ে ভারত সাহায্য করে, তারাও নাকি ভারতের থেকে ক্ষুধা মোকাবিলায় এগিয়ে!
তবে গতবারের মতোই এবারেও GHI-এর এই র্যাঙ্কিং প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বড় হরফে লেখা হয়েছে যে, Global Hunger Report 2022-তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। এটি একটু 'ত্রুটিপূর্ণ' ক্ষুধা সূচক হিসাবেও ব্যাখা করা হয়েছে শিরোনামে।
এরপরেই স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, 'ভুল তথ্যই মনে হচ্ছে বার্ষিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।'
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণনায় ব্যবহৃত চারটির মধ্যে তিনটি সূচকই শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে। এটি কখনই একটি দেশের সমগ্র জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী পরিসংখ্যান হিসাবে ধরা যায় না। অন্যদিকে চার নম্বর যে সূচকটি ধরা হয়েছে, সেটিও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কেন? কারণ চার নম্বর মাত্রাটি বিচার করা হয়েছে মাত্র ৩,০০০ জনের উপর চালানো একটি মতামত প্রদানকারী ভোটের উপর ভিত্তি করে। সেখান থেকেই হিসাব করা হয়েছে যে, মোট জনসংখ্যার কতটা অংশ অপুষ্টির শিকার হতে পারে। ১৩০ কোটির দেশে এই পদ্ধতিতে কোনও সমীক্ষা করা যে অর্থহীন, তা বলাই বাহুল্য।
কেন্দ্রের ব্যাখা, মাত্র ৩,০০০ জনের উপর 'অপিনিয়ন পোল' চালিয়ে এই পরিসংখ্যান বানানো হয়েছে। সেই পদ্ধতিও বেশ অবৈজ্ঞানিক। এর জন্য ফুড ইনসিকিউরিটি এক্সপিরিয়েন্স স্কেল-এর(FIES) মাধ্যমে হিসাব করা হয়েছে। ভারতের পুষ্টি নিয়ে তাঁদের কী মতামত, সেই বিষয়ে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ৮টি প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রশ্নগুলিও বড়ই 'অদ্ভুত'। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, 'গত ১২ মাসে কি এমন কোনও সময় এসেছে, যখন আপনার কাছে টাকা বা অন্য জিনিসের অভাব ছিল, আর আপনি খাবার জুটবে না বলে ভেবেছিলেন? আপনার কি যতটা খাওয়া উচিত্ বলে মনে হয়, তার থেকে কম খেয়েছিলেন?'
আর কয়েকজনকে করা এমন সব প্রশ্নের ভিত্তিতেই সারা দেশবাসীর পুষ্টির অবস্থা কেমন, তা নির্ধারণ করে ফেলেছেন সমীক্ষাকারীরা। এমনটাও সম্ভব?
রিপোর্টটিকে বাস্তব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলে অভিহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে যে, এতে ইচ্ছাকৃতভাবে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিনামূল্যে রেশনের মতো উদ্যোগকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে বিনা রেশন কার্ডেও আমজনতাকে বিনামূল্যে চাল-ডাল দেওয়ার বিষয়গুলি এই সমীক্ষায় ধরাই হয়নি। শুধু তাই নয়, ভারতের অপুষ্টির পরিসংখ্যানকেও আসলের থেকেও আরও ১৬.৩% কমিয়ে দেখানো হয়েছে।