রাশিয়া এবং ভারতের বন্ধুত্ব আরও এক নতুন উচ্চতা স্পর্শ করতে চলেছে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ভারত সফরে আসতে চলেছেন। পুতিনের ভারত সফরের সময় সুমেরু অঞ্চল সংক্রান্ত এই ঐতিহাসিক চুক্তির ভিত্তি স্থাপন হতে পারে। এই চুক্তিতে উত্তর সমুদ্রপথ এবং সম্পদ উন্নয়নের উপর নজর দেওয়া হবে। এই চুক্তি সই হলে আর্কটিক কাউন্সিলে ভারত বড় ভূমিকা পেতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের নয়া দরজা খুলে যাবে। এদিকে আর্কটিক নিয়ে চিনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার আবহে এই চুক্তি কৌশলগত ভারসাম্য আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তর সমুদ্রপথের উন্নয়নে নয়াদিল্লির সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে এই বছরের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেই সুনির্দিষ্ট ফলাফল বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। উত্তর সমুদ্র রুটটি রাশিয়ার উত্তর উপকূল বরাবর আর্কটিক মহাসাগরের মধ্য দিয়ে যায়। এই রুটটি ইউরোপ এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ীভাবে পণ্য পরিবহণ সক্ষম করবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্কো সফরের সময় উভয় দেশ আর্কটিক শিপিংয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছিল।
রাশিয়ার স্পেশাল আর্কটিক ডেভেলপমেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্লাদিমির পানভ এবং ভারতের নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ কুমার সিনহার যৌথ সভাপতিত্বে এই গ্রুপটি কাজ করছে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। আর্কটিক জাহাজ নির্মাণ প্রকল্পে অংশীদারিত্ব, ভারতীয় নাবিকদের পোলার নেভিগেশন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এনএসআর-এ কার্গো শিপিং সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক প্রস্তুত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল সেই বৈঠকে।
সূত্রের খবর, রাশিয়া চায় আর্কটিক কাউন্সিলে ভারতকে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা দেওয়া হোক। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মস্কো এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপের আবহে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। সুমেরু অঞ্চল জীবাশ্ম জ্বালানী এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এটি রাশিয়া এবং ভারত উভয়ের কাছেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে রাশিয়া চাইছে, উত্তরাঞ্চলীয় সমুদ্রপথকে ইরানের চাবাহার বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। আগামী দশ বছরের জন্য এই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ভারত। রাশিয়া ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রবেশের জন্য এই বন্দরটি ব্যবহার করতে চায়। পুতিনের আসন্ন ভারত সফর ভারত-রাশিয়া সুমেরু সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন প্রবেশদ্বার আর্কটিক অঞ্চল পৃথিবীর শীতলতম এবং সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের বরফ আজ দ্রুত গলে যাচ্ছে। এর ফলে আবার নতুন শিপিং রুট খুলে যাচ্ছে। এরই সঙ্গে তেল, গ্যাস, বিরল খনিজ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া আর্কটিক মহাসাগরের উপকূলের ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এই এলাকায় নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে তৎপর রয়েছেন পুতিন। ২০২৪ সালে সুমেরু রুট দিয়ে ৩৭ মিলিয়ন টনেরও বেশি কার্গো পরিবহণ করা হয়েছিল। এই আবহে সুমেরু অঞ্চল সংক্রান্ত চুক্তি হলে তা ভারতের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হবে।