শিশির গুপ্ত এবং রাহুল সিং
চিনের হাবভাবে পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না জাতীয় সুরক্ষা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা। তাই ক্রমশ সীমান্তে নিজেদের সামরিক শক্তি আরও বাড়াচ্ছে ভারত। তারই অঙ্গ হিসেবে লাদাখে উচ্চ ক্ষমতাশীল, বড় এবং নজরদারিতে পারদর্শী ১২ টি বোট পাঠাচ্ছে ভারতীয় নৌসেনা। একইসঙ্গে লাদাখ সেক্টরে তিনটি ডিভিশন, ট্যাঙ্কের একাধিক স্কোয়াড্রন, ইনফ্র্যান্টি বাহিনী পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চার আধিকারিক।
এমনিতেই গত মে থেকে শুরু হওয়া ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে লাদাখের প্যাংগং সো লেক। চিনের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতে চলতি সপ্তাহে সেখানে বোট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন বাহিনী। তার ফলে প্যাংগং সো লেক টহল দিতে পারবে সেনা এবং চিনের উচ্চ ক্ষমতাশীল ৯২৮বি ভেসেলের সঙ্গে টক্করও দিতে পারবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বায়ুসেনার সি-১৭ বিমানে করে সেগুলি লেহ'তে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছে নৌবাহিনী। তবে সেই বিশালাকৃতি বোটগুলি পাঠানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তা সমাধান করা হচ্ছে।
কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা আটকাতে ইতিমধ্যে পূর্ব এবং পশ্চিম সমুদ্রতীরে নৌসেনাকে মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দামান সাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত জাহাজ চলাচলের উপর কড়া নজর রেখেছে নৌবাহিনী।
ভারতের জাতীয় সুরক্ষা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের কাছে স্পষ্ট যে মুখে শান্তি এবং সেনা সরানোর কথা বললেও আদতে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ১,৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা চারটি পয়েন্টে সৈন্য সমাবেশ বাড়াচ্ছে চিন। গালওয়ান সেক্টরে ফৌজি মোতায়েন, গোগরা পয়েন্টে রাস্তা নির্মাণ, হট স্প্রিংয়ে যোগাযোগ উন্নত এবং প্যাংগং সো লেক এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় নেই পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ)। বরং ভারতীয় সেনাকে প্ররোচিত করে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য়।
সে কথা মাথায় রেখে চিনা আগ্রাসন রোখার জন্য সেনার তিনটি ডিভিশনকে লাদাখ সেক্টরে পাঠানো হয়েছে। তাতে রয়েছেন প্রায় ৩০,০০০ প্রশিক্ষিত জওয়ান। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, উঁচু এলাকাগুলিতেও ভারতীয় সেনার হাত আরও মজবুত করা হচ্ছে। উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চল এবং হিন্দি বলয়ের একটি রাজ্য থেকে সেনার রিজার্ভ ফর্মেশন থেকেই বেশিরভাগ জওয়ানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দৈনন্দিন প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে জওয়ানরা ওই সেক্টরে থেকেছেন বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক জানান। কোন ঘাঁটি থেকে অস্ত্র, জওয়ান লাদাখে পাঠানো হয়েছে, তা সুরক্ষার খাতিরে প্রকাশ করছে না ‘হিন্দুস্তান টাইমস’।
দ্বিতীয় আধিকারিক জানান, রিজার্ভ ফর্মেশনের জওয়ানরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গিয়েছেন। ওয়েস্টার্ন সেক্টরের একাধিক ঘাঁটি থেকে ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকলগুলি লাদাখে পাঠানো হচ্ছে। সড়ক এবং আকাশপথে লাদাখে পাঠানো হয়েছে বাড়তি বাহিনী।
তৃতীয় এক আধিকারিক বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন সেক্টরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্যাঙ্ক-সহ সামরিক সরঞ্জাম লাদাখে পাঠানো হয়েছে। যেখানে সামরিক সজ্জা যথেষ্ট রয়েছে।’ তিনি জানান, লাদাখে বাড়তি জোর দেওয়ায় সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে কোনও ঘাটতি পড়বে না।
সেনা সূত্রে খবর, কমপক্ষে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাদাখে নিজেদের অবস্থান ধরে থাকবে ভারতীয় এবং চিনা সেনা। তারপর শীতের শুরু থেকে সামনের দিকে থাকা দু'দেশের সেনার পক্ষে কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে। চতুর্থ আধিকারিক বলেন, 'আগামী তিন মাস চিনা সেনার সমাবেশ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করা অবশ্যম্ভাবী (হয়ে দাঁড়িয়েছে)।'