সিন্ধু জল চুক্তিতে সংশোধন করা প্রয়োজন। সেই বিষয়টাই পাকিস্তানকে জানাল ভারত। ১৯৬০ সালের এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ ছিল। আর সেই কারণে দুই দেশের নদী ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য আসার প্রক্রিয়াটি বিঘ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। শুক্রবার ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে মিলেছে এই খবর। এই নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে পাকিস্তান। কোর্ট অফ আরবিট্রেশনে বর্তমানে যে মামলা চলছে সেটা থেকে নজর ঘোরাতেই ভারত এই আপত্তি তুলেছে বলে দাবি ইসলামাবাদের।
ভারত গত ২৫ জানুয়ারি দুই দেশের সিন্ধু জল কমিশনারের মাধ্যমে চুক্তি 'পরিবর্তনের নোটিশ' প্রেরণ করেছে। কেন্দ্র সূত্রে খবর, পাকিস্তানের 'বাধা'র কারণে চুক্তির নিয়ম মানা এবং তার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে 'প্রতিকূলভাবে পরিস্থিতি' তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই ভারত নোটিশ জারি করতে বাধ্য হয়। আরও পড়ুন: ‘দ্রুত নদীর জল বণ্টনের চুক্তি সাক্ষর করুন’, হাসিনার সফরকালে বাংলাদেশকে তাড়া ভারতের
দীর্ঘ ৯ বছর আলোচনার পর ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতার মাধ্যমে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এটি দুই দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সেই চুক্তির বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু বাধা এসেছে। সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত উত্তেজনার কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের কথায়, 'ভারত বরাবরই সিন্ধু জল চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে সওয়াল করেছে। চুক্তির বিষয়ে পাকিস্তানের অনীহার কারণেই এখন ভারত সেটি সংশোধনের নোটিশ জারি করতে বাধ্য হয়েছে।'
চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এই প্রথমবার তাতে পরিবর্তন করার নোটিশ জারি করা হল।
নোটিশের উদ্দেশ্য
ওয়াকিবহাল সূত্রের কথায়, 'এর মাধ্যমে সিন্ধু জল চুক্তির লঙ্ঘন সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি সুযোগ করে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গত ৬২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী চুক্তির যথাযথ আপডেট করা হবে।'
২০১৫ সালে ভারতের কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পাকিস্তান। তাতে তাদের ভাগের জল কমে যাবে বলে দাবি তুলেছিল ইসলামাবাদ। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সিন্ধু জল চুক্তি মেনেই প্রকল্পে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল ব্যবহার করবে ভারত। কিন্তু তাতে কান দেয়নি পাকিস্তান। এক 'নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ' হিসাবে পুরোটা খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু ২০১৬ সালে হঠাত্ই পাকিস্তান সেই আর্জি ফেরত নিয়ে নেয়। এরপর নতুন করে দাবি তুলতে শুরু করে। তারা একটি সালিশি আদালত বসানোর দাবি তোলে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে যে বর্তমানে কোর্ট অফ আরবিট্রেশনে কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি নিয়ে শুনানি চলছে। সেটার থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই ভারত এই পন্থা অবলম্বন করেছে বলে পাকিস্তানের দাবি।
অতীতে দেখা গিয়েছে, পারস্পরিকভাবে আলাপ-আলোচনার পথেও বসতে নারাজ পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বারবার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু এই সম্পর্কে আলোচনা করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান। সেই কারণেই শেষমেশ চুক্তি সংশোধনের পথে হাঁটতে চাইছে ভারত। আরও পড়ুন: মাথায় হাত পাক সরকারি কর্মীদের, বেতনে ১০ শতাংশ কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের শরিফ সরকারের
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup