জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল ভারত। বৃহস্পতিবারের ওই শুনানিতে ভারতের তরফ থেকে বলা হয়, কার্বন নির্গমনে রাশ টানতে বিশ্বের ধনী ও উন্নত দেশগুলির উপর যে দায়িত্ব ছিল, তা তারা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আর এখন সেই তারাই পরিবেশ রক্ষার কথা বলে উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে। তাদের সম্পদের ব্যবহারের উপর লাগাম টানতে চাইছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের এহেন কঠোর অবস্থানকে সংশ্লিষ্ট মহলের তরফে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলির কী কী আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এবং তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি কী হতে পারে, সেটাই খতিয়ে দেখছে আন্তর্জাতিক আদালত।
এই শুনানিতে ভারতের হয়ে বক্তব্য পেশ করেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লুথার এম রঙ্গরেজি। তিনি বলেন, 'যদি পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য সকলের অবদান সমান হয়, তাহলে দায়িত্বও সকলকে সমানই নিতে হবে।'
তাঁর বক্তব্য, ভারত একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সুবাদে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সবথেকে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অথচ, এই পরিবর্তনের জন্য ভারতের ভূমিকা খুবই সামান্য।
রঙ্গরেজি আরও বলেন, 'উন্নত বিশ্ব, ইতিহাস সাক্ষী - যে তারাই (জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য) সবথেকে বেশি দায়ী। তার থেকেও বড় কথা হল, এই দেশগুলিই প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সবথেকে এগিয়ে এবং আর্থিকভাবেও সবথেকে মজবুত। তাই তাদের কাছেই এই সমস্যার মোকাবিলা করার সবথেকে বেশি উপায় রয়েছে।'
ভারতের এই প্রতিনিধি কড়া ভাষায় বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে ধনী দেশগুলি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সমস্ত সুবিধা লাভ করছে। অথচ, তারাই উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের সম্পদ ব্যবহার করতে বারণ করছে!
একই সঙ্গে, জলবায়ু সংক্রান্ত আর্থিক দায়বদ্ধতাগুলি পালন না করার জন্যও ভারত ধনী ও প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সমালোচনা করেছে।
এক্ষেত্রে ভারত নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে, 'উন্নত দেশগুলির সমষ্টি ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সিওপি-তে যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং অভিযোজন তহবিলে তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করার যে আশ্বাস দিয়েছিল, তা এখনও বাস্তবায়িত করা হয়নি।'
এই প্রসঙ্গেই ন্যায্যভাবে দায়বদ্ধতা রক্ষা করার বিষয়টি উত্থাপিত করেন রঙ্গরেজি। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী পরিবেশের গুণগত মানের অবনমনের ক্ষেত্রে যদি সকলের সমান অবদান থাকে, তাহলে সেই দায়িত্বও সকলকে সমানভাবেই নিতে হবে।'
প্রসঙ্গত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলি এবং দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াটুর বহু বছরের চেষ্টার ফলেই আন্তর্জাতিক আদালতে এই শুনানি চলছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের পরামর্শ চেয়ে রাষ্ট্রসংঘে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছিল। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে, এই শুনানিতে বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র এবং বৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলি-সহ মোট ৯৮টি রাষ্ট্র তাদের মতামত প্রকাশ করবে।