কাশ্মীর নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের অনধিকার চর্চা যে ভারত মেনে নেবে না, সেটা ফের স্পষ্ট করে দিল ভারত। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপের জন্য সওয়াল করেছিলেন পাকিস্তান ও জার্মানির বিদেশমন্ত্রী। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অবস্থান স্পষ্ট করে দিল ভারত ও একই সঙ্গে যাবতীয় নজর পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে আসা সন্ত্রাসবাদীদের ওপর রাখার জন্যেও আর্জি জানাল।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলায়াল ভুট্টো জারদারি ও জার্মানির বিদেশমন্ত্রী অ্যানালেনা ব্যায়েরবক বার্লিনে একটি যৌথ প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন। সেখানে উভয় নেতাই রাষ্ট্রসংঘের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ব্যায়েরবেক এটাও বলেন যে কাশ্মীর পরিস্থিতি সমাধানে জার্মানির ভূমিকা ও দায়িত্ব আছে। এই নিয়েই এদিন কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন বিশ্বের যে সব দেশগুলি বিবেকসম্পন্ন, তাদের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সোচ্চার হওয়া, বিশেষত সেটি যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে সংগঠিত হয়। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এরকম আক্রমণের ভুক্তভোগী বহু দশক ধরে ও এখনও সেই রকম ঘটনা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এতে অনেক বিদেশী নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছে বলে অরিন্দমবাবু মনে করিয়ে দেন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও FATF যে এখনো মুম্বই হানার নেপথ্যে থাকা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে সেকথা তুলে ধরেন ভারতীয় মুখপাত্র। সরাসরি পাকিস্তানের নাম না করেও তিনি বলেন যে যখন কোনও রাষ্ট্র নিজের স্বার্থে বা উদাসীনতার হেতু কোনও ব্যবস্থা নেয় না, তখন তারা শান্তিস্থাপনা নয়, তার বিরুদ্ধে কাজ করে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের বলি হওয়া নিরীহদের প্রতিও অবিচার করা হয় বলে জানান ভারতীয় মুখপাত্র।
বার্লিনে বিলা ভুট্টো অভিযোগ যে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে যা অঞ্চলের শান্তি নষ্ট করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাশ্মীর সমস্যার কোনও সমাধান হবে না ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ফিরবে না বলেও তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে জার্মানির বিদেশমন্ত্রী বলেন যে সব দেশেরই সমস্যা সমাধান করার দায়িত্ব আছে। তাই শুধু ইউক্রেন নয়, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানেও জার্মানির দায়-দায়িত্ব আছে বলে তাঁর অভিমত। ব্যায়েরবক বলেন যে তারা চান রাষ্ট্রসংঘ এখানে হস্তক্ষেপ করুক শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি আছে তা ইতিবাচক, কিন্তু দুই দেশেরই রাজনৈতিক পর্যায়ে সমস্যা নিরসনে আলোচনায় বসা উচিত বলে মনে করেন জার্মানির বিদেশমন্ত্রী। অন্যদিকে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বলেন যে ইউক্রেনে একতরফা কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটাকে যেমন মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না, তেমনই ভারত যেভাবে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা সরিয়ে দিয়েছে, সেটাও মেনে নেওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রসংঘ কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এলে অঞ্চলে শান্তি ফিরবে ও একে অপরের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন বিলায়াওয়াল ভুট্টো জারদারি। যদিও এই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে ভারত।