নিজেদের দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ যে ভারতকে দায়ী করছে, তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করল নয়াদিল্লি। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় সাউথ ব্লকে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মহম্মদ নুরুল ইসলামকে তলব করে নয়াদিল্লির তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঢাকা থেকে ভারতকে নিয়ে লাগাতার যে বিরূপ মন্তব্য করা হচ্ছে, তা মোটেও কাম্য নয়। ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব ছড়ানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাতে ভারতের কোনও ভূমিকা নেই। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সরকারের অবস্থানকে মিলিয়ে ফেললে সেটা আদতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যই ক্ষতিকারক হবে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে।
'বাংলাদেশের এরকম মন্তব্যই দায়ি', স্পষ্ট কথা ভারতের
ভারতীয়ে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আগেও (ভারত স্পষ্টভাবে) জানিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে আছে ভারত। যে বিষয়টি একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সময় জানানো হয়েছে। কিন্তু এটা হতাশাজনক বিষয় যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের নিয়মিত যে সব বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভারতকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক বিষয়ের জন্য আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে। লাগাতার নেতিবাচকতার জন্য বাংলাদেশের এরকম মন্তব্যই দায়ি।'
‘আশা করব যে বাংলাদেশ প্রতিদান দেবে’
সেইসঙ্গে হাসিনার মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের অবস্থানের কোনও সম্পর্ক নেই এবং হাসিনার ভাষণের সঙ্গে নয়াদিল্লির কোনও যোগ নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়ে নয়াদিল্লির তরফে বলা হয়েছে, 'পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্কের জন্য ভারত সরকার পদক্ষেপ করে যাবে। আর আমরা আশা করব যে (দ্বিপাক্ষিক) সম্পর্কের পরিবেশটা নষ্ট না করে বাংলাদেশও প্রতিদান দেবে।'
নিজেদের দোষ ঢাকতে ভারতের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ?
আর ভারতের তরফে যেদিন সেই মন্তব্য করা হয়েছে, তার আগেরদিনই নিজেদের দেশের অভ্যন্তরে তাণ্ডবের জন্য ঘুরিয়ে নয়াদিল্লির ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে ঢাকা। ঢাকার তরফে দাবি করা হয়, বুধবার রাতে হাসিনার 'মিথ্যে এবং মনগড়া' ভাষণের জন্যই ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। ভারতে বসে হাসিনা যে ভাষণ দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘স্বাস্থ্যকর’ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মোটেও সহায়ক নয়।
সেই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে যাতে এরকম ভাষণ দেওয়া থেকে বিরত করা যায়, তা নিয়ে ভারতকে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়। ঢাকার তরফে দাবি করা হয়, হাসিনা যে বারবার 'মিথ্যা ও মনগড়া' মন্তব্য করেছেন, তাতে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের ভাবাবেগে আঘাত করছে। সেই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে থামাতে বলে বাংলাদেশ। আর সেই পদক্ষেপেরই পালটা দিল ভারত।