জলবায়ু পরিবর্তনের কোপে ভারত। জল যন্ত্রণায় ভুগেছে একাধিক রাজ্য। তাই এবার জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় নতুন প্রকল্প চালু করেছে ভারত। নাম, মিশন মৌসম। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টির মতো আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাই হল এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
আরও আগে, আরও সহজভাবে যাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়, কিংবা আবহাওয়ার সম্ভাব্য পরিবর্তনের প্রতিটি এলার্ট যাতে আগেভাগে হাতে চলে আসে, তা মাথায় রেখেই মৌসম জিপিটি নামে একটি এআই মডেল তৈরি করা হবে। 'মৌসম জিপিটি', একটি চ্যাটজিপিটি অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীদের আগামী পাঁচ বছরে লিখিত এবং অডিয়ো, উভয়ভাবেই দ্রুত আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য পেতে সহায়তা করবে। এই পরিকল্পনা সফল হলে, বড় ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তনের চেষ্টা করা প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটিই হবে ভারত।
বিশদে মিশন মৌসম
আবহাওয়া, বিশেষ করে বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের এই প্রকল্পকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে, পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে এআই মডেলটি। দেখা হবে যে এই প্রযুক্তি আদৌ বৃষ্টিপাত বাড়াতে বা কমাতে পারবে কিনা। এরপর, এইভাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পকে পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, আর্থ সায়েন্সেস সেক্রেটারি এম. রবিচন্দ্রন উল্লেখ করেছেন যে স্বাধীনতা দিবসের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজে আসতে পারে এই প্রযুক্তি। তখন প্রয়োজনে বৃষ্টিও রোধ করতে করা যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক বন্যা, খরা এবং শিলাবৃষ্টির মতো আরও চরম আবহাওয়ার ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে ভারত। আর মিশন মৌসম এই বিপর্যয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বন্যা প্রতিরোধের জন্য বৃষ্টি বন্ধ করা বা খরার সময় বৃষ্টি তৈরি করা।
চরম আবহাওয়াকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতের মিশন মৌসম, মৌসম জিপিটি-এর মতো এআই টুলের পাশাপাশি ক্লাউড সিডিংও করার কথা ভেবেছে৷ উন্নত মানের রাডার, সুপার কম্পিউটার, শক্তিশালী সেন্সর সহ রিয়েল-টাইম ডেটা প্রচারের জন্য বিশেষ সিস্টেমের সাহায্যে প্রকল্পটির কাজ চলবে। এই নতুন প্রযুক্তির দরুণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও আগে জানা যাবে। হঠাৎ করে ভারী বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথাও জানতে পারবে আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়া নিয়ে কারসাজির প্রচেষ্টা ভারতে নতুন নয়। ভারত ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরির কৌশল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, বিমান ব্যবহার করে ক্লাউড সিডিং করছে। এছাড়াও জমাট বাধা মেঘের বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করতে, রাজ্যে বৃষ্টিপাত বাড়ানোর জন্য, সরকার মহারাষ্ট্রে ক্লাউড অ্যারোসল ইন্টারঅ্যাকশন এবং বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করাই মতো পাইলট প্রকল্পগুলি চালাচ্ছে৷
ক্লাউড সিডিং কী
ক্লাউড সিডিং, একটি প্রযুক্তিগত পদ্ধতি, যা আকাশের মেঘগুলোকে বৃষ্টি তৈরির জন্য প্রভাবিত করতে পারে। বিমানের মাধ্যমে ক্লাউড সিডিং করা যেতে পারে। বৃষ্টি নামানোর প্রয়োজনে বিমান মেঘের মাঝে সিলভার আয়োডাইডের ছোট ছোট কণা ছেড়ে দেওয়া দিয়ে আসে। তারপর খুব সহজেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চিন, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া, সীমিত উপায়ে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে, বৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এই কয়েকটি দেশে ফলের বাগান এবং শস্যক্ষেত্রের ক্ষতি রোধ করার জন্য, শিলাবৃষ্টি হ্রাস করার লক্ষ্যে ওভারসিডিং নামে ক্লাউড সিডিং প্রকল্পও চালু রয়েছে। এ প্রসঙ্গে, প্রাক্তন এমওইএস সচিব, মাধবন রাজীবন, টাইম অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন সীমিত সাফল্যের সাথে বৃষ্টি বাড়ানোর জন্য আমরা ক্লাউড সিডিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু ক্লাউড দমনে খুব বেশি কিছু করা হয়নি। ভারতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও এর বিজ্ঞান বোঝা কঠিন এবং প্রযুক্তি জটিল। তাই তাঁর মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনে ভারতের গবেষণা শুরু করা উচিত এবং বিনিয়োগ দরকার। জানা গিয়েছে, চরম আবহাওয়া ঘটনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য সরকার মিশন মৌসম-এর জন্য, প্রাথমিকভাবে ২০০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। পরবর্তীতে এর জন্য আরও তহবিল বরাদ্দ করা হবে।