ইউক্রেন দখলের জন্য রাশিয়া হামলা চালাতেই গোটা বিশ্বের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছিল। তেলের দাম, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চিন্তা তো ছিলই; সঙ্গে ছিল খাদ্য সংকটের চিন্তা। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম রফতানিকারক দেশ রাশিয়া। তারপরেই তালিকায় অন্যতম দেশ ইউক্রেন। তবে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন থেকে এখন আর গম রফতানি হচ্ছে না। এদিকে রাশিয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বহু দেশ। এই আবহে ইউক্রেনের স্থান নিতে চাইছে ভারত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার এমন নীতি আনার পরিকল্পনা করছে যা থেকে বিশ্বের অন্যতম গম রফতানিকারক দেশ হয়ে উঠতে ভারত।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতেই গম আমদানিকারী দেশগুলি বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। গম আমদানিকারী দেশগুলির পরবর্তী ঠিকানা যাতে ভারত হয়, তার জন্য পদক্ষেপ করতে ইতিমধ্যেই ছক কষছে ভারত সরকার। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই পদক্ষেপ করা হতে পারে জানা গিয়েছে রিপোর্টে। গমের মান পরীক্ষা, পরিবহণের মতো বিষয়গুলির দিকে নজর দিয়েছে ভারত। জানা গিয়েছে বন্দরে গম পৌঁছে দিতে অতিরিক্ত রেল ওয়াগনেরও ব্যবস্থার করছে সরকার।
চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ না থাকায় বিশ্ব বাজারে গমের দাম তড়তড়িয়ে বাড়ছে। এদিকে বিশ্বে চিনের পর ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উত্পাদনকারী দেশ। এদিকে ভারতের ভাণ্ডারে অতিরিক্ত গম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তবে পরিবহণের প্রতিবন্ধকতার জেরে এই অতিরিক্ত গম রফতানি করা কিছুটা কঠিন। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করার দিকেই এগোচ্ছে মোদী সরকার।
এমনিতেই ধাপে ধাপে ভারত গম রফতানির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ২০২০ সালে যেখানে ভারত ১.১২ মিলিয়ন টন গম রফতানি করে, সেখানে ২০২১ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬.১২ মিলিয়ন টন। তবে সরকার নতুন যে পদক্ষেপ করতে চলেছে তাতে এবছর গম রফতানির পরিমাণ দশ মিলিয়ন টন হবে বলে আশা সরকারের। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পাশাপাশি রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকারগুলির সাথেও আলোচনা করছে সরকার। তাছাড়া বড় বড় রফতানিকারক সংস্থার সাথেও যোগাযোগ করেছে কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উচ্চ মানের শস্য রফতানি করতে সাহায্য করতে আগ্রহী। কেন্দ্র বিশ্ব বাজারের ক্রেতাদের কাছে ভারত প্রমাণ করতে চায় যে তারা উচ্চ মানের গমের স্থিতিশীল সরবরাহ করতে সক্ষম। এর জন্য মোদীর প্রশাসন গমের গুণমান পরীক্ষা করার জন্য ২১৩টি সরকার-অনুমোদিত পরীক্ষাগার নিয়োগ করেছে এবং রাষ্ট্র-চালিত ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডকে গুণমান পর্যবেক্ষণ করতে বলেছে। পাশাপাশি বন্দরের কাছাকাছি ওয়্যারহাউজ তৈরি করেছে সরকার। এখন মূলত দেশের পশ্চিম উপকূল থেকে গম রফতানি হয়। তবে ভবিষ্যতে পূর্ব উপকূল থেকেও গম রফতানি করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। এর মাধ্যমে সরকার একদিকে যেখানে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে পারবে অপরদিকে কৃষকদের থেকে গম কেনার ক্ষেত্রে সরকারের খরচও কমবে।