আজ ফের একবার মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। এই আবহে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে চলল 'স্লোগান যুদ্ধ'। আজ রাজ্যসভায় একদিকে বিজেপি সাংসদরা 'মোদী, মোদী' স্লোগান তুলেছিলেন। অন্যদিকে বিরোধীরা 'ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া' স্লোগান তুলেছিলেন। সেই সময় বিদেশ মন্ত্রকের কাজের খতিয়ে দিতে বক্তৃতা পেশ করছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জানা গিয়েছে, বিরোধীদের আচরণে বেশ বিরক্ত হয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বিরোধীদের দাবি ছিল, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিস্তারিত বিবৃতি দেওয়া উচিত। এই দাবিতেই বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই উভয় কক্ষকে প্রায় অচল করে রেখেছেন বিরোধীরা।
এদিকে আজকের ঘটনার প্রেক্ষিতে জয়শঙ্কর অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদের উদ্দেশ্য হল ভারতের যে কোনও অগ্রগতিরই সমালোচনা করা। উন্নয়নের বার্তা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক, এটা চায় না বিরোধীর। জয়শঙ্কর বলেন, 'আমার আজ খারাপ লাগছে। বিরোধীরা কোনও কিছু শুনতেই প্রস্তুত নয়। মনে হচ্ছিল তারা দেশের যেকোনও উন্নয়নেরই সমালোচনা করতে চাইছে। বৈদেশিক নীতি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমরা সাধারণত একসাথে কাজ করি। আমরা দেশের মধ্যে বিতর্ক করতে পারি। কিন্তু দেশের বাইরে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট প্রদর্শন করা উচিত। আজকে বিরোধীদের উচিত নিজেদের আচরণ খতিয়ে দেখা। যখন জাতীয় স্বার্থের কথা আসে, তখন রাজনীতিকে একপাশে রেখে তার প্রশংসা করা উচিত।'
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রেহাই পাচ্ছে না মহিলা ও শিশুরাও। এরই মধ্যে সম্প্রতি মণিপুরে তিন মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছিল। সেই ঘটনার বিভীষিকাময় এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা দেশ তাতে স্তম্ভিত হয়েছিল। ঘটনার ৭৭ দিন পর মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জানা গিয়েছে, ভাইরাল ভিডিয়োর ঘটনাটি ঘটে ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে কাংপোকপি জেলায়। পুলিশের এফআইআর অনুযায়ী, সেই ঘটনায় নির্যাতিতা মহিলাদের পরিবারের দুই সদস্যকেও খুন করা হয়েছিল। এফআইআরে বলা হয়েছে, ৪ মে এক কুকি পরিবারের ৫ সদস্য আতঙ্কে বনে লুকিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। তারপর তিনজন নারীকে নগ্ন করিয়ে হাঁটানো হয়। ২১ বছর বয়সি এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তিন মহিলা কোনওরকমে পালিয়ে যান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এই ঘটনাকে 'দেশের লজ্জা' বলে আখ্যা দেন। তবে মোদীর এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট নন বিরোধীরা। তারা সংসদে এই নিয়ে মোদীর বিবৃতি দাবি করেছেন।