৬২ বছরের পুরোনো সিন্ধু জল চুক্তি (বা সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি) পুনর্বিবেচনা ও সংস্কার করার দাবি জানিয়ে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ পাঠাল ভারত সরকার।
সূত্রের খবর, ভৌগোলিকভাবে যে নদীগুলি ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে, সেই নদীগুলির ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। কিন্তু, সেই সমস্যা মেটানোর বদলে বরাবরই একরোখা মনোভাব দেখিয়েছে ইসলামাবাদ। সেই কারণেই ভারতের তরফে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে সংশ্লিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত ৩০ অগস্ট এই চুক্তির ৭(৩) ধারা অনুসারে পড়শি দেশকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি এই বিষয়েই একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল ভারত। 'পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞপ্তি' শীর্ষক সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতেই এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
৭(৩) ধারা মেনেই এই চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসতে চেয়েছে ভারত। নিয়ম অনুসারে, দুই দেশের সরকারের মধ্যে এই আলোচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ন'বছর ধরে লাগাতার আলোচনার পর ১৯৬০ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। সেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উপস্থিত ছিল বিশ্ব ব্যাংক। তারাও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সবথেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা একটি সমঝোতার ভিত্তি। কিন্তু, ইদানীংকালে মূলত জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসের জেরে এই বোঝাপড়ার উপরেও চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে।
তারই মধ্য়ে জম্মু ও কাশ্মীরের চেনাব এবং নীলম নদীর উপর কিষাণগঙ্গা ও ব়্যাটল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য়ে বিরোধ চরমে উঠেছে। যার জন্যই সিন্ধু জল চুক্তিতে কিছু বদল আনা দরকার বলে মনে করছে ভারত সরকার। তাছাড়া, চুক্তির ৭(৩) ধারায় সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যাতে যেকোনও সময় দুই দেশের প্রয়োজন অনুসারে চুক্তির শর্তে বদল আনা যেতে পারে।
নয়া দিল্লির বক্তব্য, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। সেই কারণে সিন্ধু জল চুক্তিতেও বেশ কিছু বদল আনা অত্যন্ত আবশ্যিক। এক্ষেত্রে জনবণ্টন ও পরিবর্তিত জনঘনত্ব, পরিবেশ সংক্রান্ত নানা বিষয়ের কথা ভারতের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া, জাতীয়স্তরে কার্বন নির্গমন কমাতে ভারত সরকার পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। একইসঙ্গে, সীমান্ত পেরিয়ে আসা সন্ত্রাসবাদ নিয়েও উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এইসব একাধিক কারণেই চুক্তিতে বদল আনার পক্ষে সওয়াল করেছে ভারত সরকার।