রাহুল সিং
মার্চের মধ্যে প্রথম তেজস লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এলসিএ এমকে-১এ) চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনও সেটি হাতে না পাওয়ায় একেবারেই সন্তুষ্ট নয় ভারতীয় বায়ুসেনা। কারণ দেরিতে যুদ্ধবিমান হাতে আসার ফলে বায়ুসেনার যুদ্ধের প্রস্তুতির বিষয়টা ধাক্কা খাবে। সেই পরিস্থিতিতে তেজসের নির্মাতা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল) যাতে নির্দিষ্ট সময় মেনে যুদ্ধবিমানের ‘ডেলিভারি’ দেয়, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বায়ুসেনার আধিকারিকরা। 'বৃদ্ধ' মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে বসিয়ে দিয়ে ধাপে-ধাপে তেজস মার্ক ১-কে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা আছে বায়ুসেনার। সেজন্য ৪৮,০০০ কোটি টাকায় ৮৩টি এক ইঞ্জিন-বিশিষ্ট তেজস মার্ক ১ যুদ্ধবিমানের বরাত দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমানের ‘ডেলিভারি’ দিতে দেরি হওয়ায় বায়ুসেনার চিন্তা বাড়ছে। নাম গোপন রাখার শর্তে ভারতীয় বায়ুসেনার এক অফিসার বলেছেন, 'আমরা হ্যালকে বলেছি, এতটা যে দেরি হচ্ছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সেটার ফলে আমাদের লড়াইয়ের বিষয়টা ধাক্কা খাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রথম এমকে-১এ যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও সেটার অপেক্ষায় আছে ভারতীয় বায়ুসেনা।'
তাহলে কবে প্রথম তেজস মার্ক ১ যুদ্ধবিমান পাবে?
নাম গোপন রাখার শর্তে হ্যালের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় কাজ মিটিয়ে নিয়ে আগামী মাসেই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তেজস এমকে-১এ যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়া হবে। তারপর নির্ধারিত ‘ডেডলাইন’ মেনে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে ১৬টি যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়া হবে বায়ুসেনার হাতে। আর ২০২৮-২৯ অর্থবর্ষের মধ্যে বায়ুসেনার হাতে ৮৩টি যুদ্ধবিমান চলে আসবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আধিকারিকরা।
তবে ধন্দে আছেন বায়ুসেনার অফিসাররা
যদিও আদৌও সেই ‘ডেডলাইন’ মেনে তেজস এমকে-১এ যুদ্ধবিমানের ‘ডেলিভারি’ হবে কিনা, তা নিয়ে ধন্দে আছেন বায়ুসেনার অফিসারদের একাংশ। তারপর তো পাইলটদের প্রশিক্ষণের বিষয় আছে। টেকনিশিয়ান এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবমিলিয়ে তেজস এমকে-১এ যুদ্ধবিমানের পুরো স্কোয়াড্রন তৈরি হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: Rafale Fighter Jet: এবার রাফাল যুদ্ধবিমান হবে 'মেক ইন ইন্ডিয়া', জমি খুঁজছে ফরাসি সংস্থা
নাম গোপন রাখার শর্তে বায়ুসেনার এক অফিসার বলেছেন, ‘এতদিনে শেষ কয়েকটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বসিয়ে দিয়ে প্রথম এলসিএ এমকে-১ স্কোয়াড্রন তৈরি করে ফেলার কথা ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার। পাইলটদের নয়া যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে উঠতে, টেকনিশিয়ান এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য সময় লাগবে। আমরা যদি নির্দিষ্ট সময় হাতে যুদ্ধবিমান না পাই, তাহলে (বায়ুসেনার) ক্ষমতা ধাক্কা খাবে। মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে কোনও প্ল্যান বি নেই।’
কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমানের ডেলিভারিতে দেরি হচ্ছে কেন?
গত ২৮ মার্চ বেঙ্গালুরুতে তেজস এলসিএ এমকে-১এ যুদ্ধবিমানের প্রথম ‘সর্টি’ হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেইসময় ওই যুদ্ধবিমানের কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল। ইঞ্জিন নিয়েও সমস্যা ছিল। কিন্তু হ্যালের হাতে পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ছিল না। আর পুরো বিষয়টি ঝুলে গিয়েছে, কারণ মার্কিন সংস্থা জিই অ্যারোস্পেসের তরফে নির্দিষ্ট সময় এফ৪০৪ ইঞ্জিন দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ১০ মাস পরে ইঞ্জিন আসায় হ্যালও লেটে চলছে বলে সূত্রের খবর।