বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা থামছেই না। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যেন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই আবহে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে এবার মার্কিন কংগ্রেসে সরব হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনপ্রণেতা রাজা কৃষ্ণমূর্তি। এই নিয়ে কৃষ্ণমূর্তির বক্তব্য, 'গোটা বিশ্ব দেখছে।' মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণমূর্তি বলেন, 'বাংলাদেশি হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে অত্যাচার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বলতে আমি আজ উঠেছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩ লাখ থেকে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। তাঁদের একটা বড় অংশ হিন্দু ছিলেন। আর আজও বাংলাদেশে হিন্দুদের নিশানা করা হয়। তঁদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, ব্যবসা নষ্ট করা হচ্ছে, মন্দিরে হামলা চালানো হচ্ছে।' (আরও পড়ুন: OpenAI CEO স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ বোনের, জবাব দিল পরিবার)
আরও পড়ুন: 'ওরা চায় ভারত আক্রমণ করুক', বাংলাদেশে ভোট না করাতে ষড়যন্ত্র মহম্মদ ইউনুসের?
কৃষ্ণমূর্তি আরও বলেন, 'গত অগস্ট মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র অগস্ট মাসেই ২০০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপরে। আমি এই নিয়ে মার্কিন বিদেশ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি আসন্ন সেনেট কনফর্মেশন শুনানির সময় এই নিয়ে পদক্ষেপের দাবি জানাব। তবে আমাদের একর থেকেও বেশি করতে হবে। বাংলদেশের সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে আমার সহকর্মীদেরও এগিয়ে আসতে আবেদন জানাচ্ছি আমি। গোটা বিশ্ব দেখছে। আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে পারি না।' (আরও পড়ুন: 'ওদিক থেকে এদিকে সমস্যা না হয়... ক্ষতি না করতে পারে', নৌবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক মমতার)
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে একাধিক হিন্দু মন্দিরে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সেবাশ্রম মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। এই ঘটনায় গাজিটেকা এলাকার বাসিন্দা হোসেন টিপুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, ১ জানুয়ারি সকাল সকাল এই হোসেন টিপু 'হরে কৃষ্ণ' নাম জপতে জপতে মন্দিরে প্রবেশ করে। পরে সেখানে এই তাণ্ডব চালায় সে। (আরও পড়ুন: কানাডাকে ৫১তম মার্কিন প্রদেশ করতে চান ট্রাম্প, 'অপমান হজম' করা ট্রুডো বললেন…)
আরও পড়ুন: ভোটে জিতেও শান্তি নেই, পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় বিপাকে ট্রাম্প!
এর আগেও গত ২১ ডিসেম্বর নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হামলা চালিয়েছিল ডাকাতরা। সেই ঘটনায় এক সেবায়েতকে খুন করা হয় এবং লুটপাট চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। নিহত সেবায়তের নাম তরুণ চন্দ্র দাস। এর আগে ১৯ এবং ২০ ডিসেম্বর ময়মনসিংয়ের হালুয়াঘাট উপজেলায় দুটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছিল। ২০ তারিখ শাকুয়াই ইউনিয়নের বন্দেরপাড়া মন্দিরের দুটি মূর্তি ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। এদিকে ১৯ তারিখ বিলডোরা ইউনিয়নের একটি মন্দিরে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালুয়াঘাট থানার ওসি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি জানিয়েছেন যে সেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলালউদ্দিন নামে এক যুবককে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছিল। যুবক নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন হালুয়াঘাট থানার ওসি। (আরও পড়ুন: রানাঘাটে ভারতের ৫ কিমি জমি কি সত্যি বাংলাদেশের দখলে? বিতর্কের মাঝে মুখ খুলল BSF)
আরও পড়ুন: মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে আমেরিকার নামে রাখা হবে: ট্রাম্প
তারও আগে গত ১৭ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শ্মশান কালী মন্দিরের পাঁচটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপর ২২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিসংখ্যান অবশ্য মানতে চায়নি বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস উইংয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, অতিরঞ্জিত তথ্য পেশ করা হয়েছে। আর সংখ্য়ালঘুদের উপরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটা মূলত রাজনৈতিক। আর তারইমধ্যে পরপর হিন্দু মন্দিরে হামলা চালানোর ঘটনা সামনে আসছে বাংলাদেশ থেকে।