লাদাখ ও সিকিম সীমান্তে আসল নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) সংলগ্ন এলাকায় ভারত ও চিন অতিরিক্ত সেনা নিয়োগের জেরে পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার বেজিং জানিয়েছে, ভারত সেনা সমাবেশ বাড়ানোর পালটা হিসেবেই সীমান্তে সামরিক ব্যবস্থা জোরদার করায় উদ্যোগী হয়েছে চিন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের খবর, LAC বরাবর কয়েকশো অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে চিন। বিতর্কিত গলওয়ান উপত্যকায় প্রায় ১০০ তাঁবু ফেলেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। এ ছাড়া ডেমচকের কাছাকাছি অঞ্চলেও সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে বেজিং।
চিনের সামরিক তৎপরতার জেরে সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লিও। গত কয়েক দিনে গলওয়ান উপত্যকা ও উত্তর সিকিমের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সেনার তরফে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আকসাই চিনে এসেছে ভারতীয় সেনা, অভিযোগ চিনের
সীমান্তে অস্থিরতা সম্পর্কে হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রশ্নের জবাবে চিনের বিদেশমন্ত্রক ম্যান্ডারিন ভাষায় এক বিবৃতি মারফৎ বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ভারতীয় সেনাবাহিনীকেই দায়ী করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিম (লাদাখ) ও সিকিম অঞ্চলে ভারতৃচিন সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে ভারতীয় সেনা। এর জেরে চিনা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিয়মিত টহলদারি ব্যবস্থা-সহ স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়েছে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
তবে পর পর দুই দিন এই বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিদেশমন্ত্রকের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
গত ৫ ও ৬ মে রাতে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং সরোবরের কাছে ভারত ও চিনা সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং তার পরে ৯ মে উত্তর সিকিমে ফের ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের জেরে দুই পক্ষের একাধিক সেনাকর্মী জখম হওয়ার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর পরে নতুন আর কোনও সংঘাতের খবর না পাওয়া গেলেও আগের ঘটনার জের এবং সীমান্তে সাম্প্রতিক সামরিক সৎপরতার জেরে ভারত ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনার শিকড় খুঁজতে চিনের বিরুদ্ধে WHO-এর তদন্ত চাইল ভারত-সহ ১০০ দেশ
এ ছাড়া, সম্প্রতি কৈলাস-মানস সরোবর সড়কের অংশ হিসেবে উত্তরাখণ্ডের ধারচুলা থেকে লিপু লেখ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে নেপাল। কাঠমান্ডির দাবি, সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে নেপালের ভূখণ্ডের উপরে রাস্তা নির্মাণ করেছে ভারত। সেই দাবি নস্যাৎ করে দিল্লি জানিয়েছে, ওই রাস্তা পুরোটাই ভারতীয় ভূখণ্ডের উপরে তৈরি হয়েছে।
কিছু দিন আগে তার জেরে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে নামোল্লেখ না করে সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, নেপালের এই অভিযোগের পিছনে অন্য পক্ষের কোনও ইন্ধন কাজ করছে। এই মন্তব্যেও দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেপাল।
ঘটনা হল, ব্রিটিশ আমলের চুক্তি অনুযায়ী কালী নীদীর পূর্ব প্রান্তের জমি নেপালের এবং পশ্চিম প্রান্তের জমি ভারতের ভাগে পড়েছে। নেপাল দাবি করেছে, সদ্য নির্মিত সড়ক নদীর পূর্ব প্রান্তে তৈরি হয়েছে এবং তার জেরে চুক্তিভঙ্গের দায় ভারতের।
অন্য দিকে, ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, রাস্তা গিয়েছে নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে, যা বরাবরই ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবে চিহ্নিত। নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চিনপ্রীতি সর্বজনবিদিত। তাই কাঠমান্ডুর এই অহেতুকি কাজিয়ায় চিনের ছায়া দেখতে পাচ্ছে দিল্লি।