আদতে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়র। যোগেশ পাঞ্চাল নামে ওই ভারতীয় যুবকের শুকনো ফল এবং আপেলের ব্যবসাও রয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন, সেই ব্যবসা ছড়িয়ে দেবেন সুদূর ইরানে। দু'চোখে সেই স্বপ্ন নিয়েই গত ৫ ডিসেম্বর তেহরানের ইমাম খোমেনেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি।
কিন্তু, বিধি বাম। ইরানের স্বৈরাচারী সরকার যে কতটা ভয়াবহ, আর নৃশংস, তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি যোগেশের। যার জেরে টানা প্রায় দু'মাস সেদেশের ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি থাকতে হয় তাঁকে। শেষমেশ ভারত সরকারের মধ্যস্থতায় ছাড়া পান তিনি। বাড়ি ফেরেন গত মঙ্গলবার।
যোগেশের স্ত্রী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যে কোনও মানুষই কোনও নতুন জায়গায় গেলে আনন্দে উত্তেজিত থাকে। সেই উত্তেজনা থেকেই যোগেশ ইরানের সুন্দর কিছু জায়গার ছবি তুলে তাঁকে হোয়াট্সঅ্য়াপে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু, তার জন্য যে তাঁকে এত বড় খেসারত দিতে হবে, একথা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা।
যোগেশ ও শ্রদ্ধার দুই সন্তান রয়েছে। যোগেশ জানান, এটা ঠিক যে ডিটেনশন সেন্টারে তাঁর উপর কোনও অত্যাচার করা হয়নি। কিন্তু, সেখানে প্রায় দু'মাস বন্দি থাকা, এবং সেটাও কোনও অপরাধ না করে - এটাই তো সবথেকে বড় অত্যাচার। কারণ, যোগেশ আসলে বুঝতেই পারছিলেন না, আদৌ কোনও দিন তাঁকে সেখান থেকে ছাড়া হবে কিনা!
যোগেশ আগে থেকেই এয়ার কুলার তৈরির একটি ব্যবসা চালান। তার সঙ্গে সম্প্রতি ড্রাই ফ্রুট এবং আপেল আমদানি ও রফতানি শুরু করেন তিনি। ব্যবসা সূত্রেই তেহরানের এক বাসিন্দার সঙ্গে হোয়াট্সঅ্য়াপে আলাপ হয় যোগেশের। তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ইরান যান তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, ওই ব্যক্তির সাহায্যে নিজের ফলের ব্যবসা আরও বাড়ানো।
যোগেশ জানান, হোয়াট্সঅ্যাপে স্ত্রীকে তেহরানের কিছু দ্রষ্টব্য স্থানের ছবি পাঠানোর পর হোটেলে ফিরে যান তিনি। হোটেলের ঘরে বসে তিনি যখন হোয়াট্সঅ্যাপ কলে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনই সাধারণ পোশাকের কয়েকজন পুলিশকর্মী সেখান পৌঁছন এবং তাঁকে আটক করে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে জানা যায়, তাঁকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ, তিনি তেহরানের বিভিন্ন জায়গায় নিজের সেলফি তুলে সেই ছবি হোয়াট্সঅ্যাপে ফরওয়ার্ড করেছিলেন। কিন্তু, তেহরানে এই ধরনের ছবি তোলা নিষিদ্ধ এবং তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। যদিও যোগেশ সেটা জানতেন না।
এরপর ইরানের দূতাবাস এবং ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে যোগেশের পরিবার। কিন্তু, প্রাথমিকভাবে ইরানের দূতাবাসের তরফে কোনও সাহায্য পাননি পরিবারের সদস্যরা।
এরপর সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরকে চিঠি লেখেন যোগেশের পরিবারের সদস্যরা। প্রায় একমাস পর যোগেশের বর্তমান অবস্থান জানা যায়। মহারাষ্ট্রের স্থানীয় প্রসাশন এবং বিদেশ মন্ত্রকের সহায়তা ও উদ্যোগে অবশেষে মুক্তি পান যোগেশ। গত মঙ্গলবার ফেরেন নিজের দেশ, নিজের বাড়িতে!