ভারতে কৃষক আন্দোলনের জেরে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ। এই শিরোনামে সিএনএনের একটি রিপোর্ট শেয়ার করে আমেরিকার পপ স্টার রিহানা বলেন যে কেন এই নিয়ে কেউ কথা বলছে না। এরপর একই টুইট করেন পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থানবার্গ। এর জেরেই শুরু হল বিতর্ক। এটি ভারতের সার্বভৌমত্ব্যের ওপর হানা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ, মোটের ওপর এই কথা বলে টুইটারে সরব হলেন রাজনীতিবিদ থেকে সেলেবরা। খোদ টুইট করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে কোনও শক্তি ভারতের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। মোটের উপর জাতীয়তাবাদে জারিত বার্তার মাধ্যমে দশ কোটি ফলোয়ার সম্পন্ন রিহানাকে মোকাবিলা করল ভারতীয় সরকার।
বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয় যে চাঞ্চল্যকর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করার লোভ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বেঠিক। এভাবেই ঘুরিয়ে রিহানা, গ্রেটাদের ‘পরামর্শ’ দিয়েছে সাউথ ব্লক। সেই বিবৃতির রেশ ধরে আসরে নামেন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি রিটুইট করে শাহ লেখেন, ‘কোনও মিথ্যা প্রচার ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না। একমাত্র উন্নয়নই সেই কাজটা করতে পারবে। উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত ঐক্যবদ্ধ আছে।’ সেই সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের দুটি '#IndiaTogether' (ভারত একত্রিত) এবং '#IndiaAgainstPropaganda' (কুপ্রচারের বিরুদ্ধে ভারত) ট্যাগ ব্যবহার করেন শাহ। সেই পথে হেঁটে জাতীয়তাবাদকেই হাতিয়ার করেছেন শাহের সতীর্থরা। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল টুইটারে লেখেন, ‘ভারতে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায় ভয় পেয়ে আমাদের দেশ এবং দেশের গণতন্ত্রকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে আন্তর্জাতিক শক্তি।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্মৃতি ইরানি, হরদীপ সিং পুরী, ভি কে সিং, রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশাঙ্ক’, ধর্মেন্দ্র প্রধানরাও ‘ভারতকে অপমান’ করতে চাওয়া শক্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।
শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, বলিউড, খেলাধুলোর মহল থেকেও সেই জাতীয়তাবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নাক না গলানোর জন্য’ রিহানা, গ্রেটাদের পরামর্শ দেন তাঁরা। একইসঙ্গে জানান, কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমনে কেন্দ্রীয় সরকার যে পদক্ষেপ করছে, সেদিকেও নজর দেওয়া হোক। ‘কেউ যাতে দেশকে বিভক্ত করতে না পারে’, তা নিশ্চিত করার আর্জি জানান করণ জোহর। অজয় দেবগণ বলেন, কেউ যেন ‘ভারত বা ভারতীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে কোনও মিথ্যা প্রচারের ফাঁদে’ পা না দেন। সরকারের পাশে দাঁড়ান সুনীল শেট্টিদের মতো বলিউড তারকারা।
পিছিয়ে থাকেনি ভারতীয় ক্রিকেট মহলও। সবথেকে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য ভেসে এসেছে সচিন তেন্ডুলকরের টুইটার থেকে। তিনি লেখেন, ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা যাবে না। বাহ্যিক শক্তি দর্শক হতে পারে, কিন্তু অংশগ্রহণকারী নয়। ভারতীয়রা ভারতকে চেনেন এবং তাঁরাই ভারতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আসুন, আমরা দেশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকি।’ একইসুরে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক অনিল কুম্বলে লেখেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয় সমাধান করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শী ভারত।’
তবে দেশের বিনোদন জগত থেকে বিক্ষিপ্ত স্বরও শোনা গিয়েছে, যাঁরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিনেতা-গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ রিহানাকে গান উৎসর্গ করেছেন। আলি ফজল বলেছেন যে কৃষক বিক্ষোভ এখন আর ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ নেই। গায়ক জ্যাজি বি আবার অক্ষয় কুমারকে আক্রমণ শানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আপনি মোটেও সিং ইজে কিংয়ের নমুনা নন। আসল কিংরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ভুয়ো কিং অক্ষয় কুমার।’
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই জাতীয়তাবাদে জারিত বার্তা এবং কৃষকদের সমর্থনদের মধ্যেই প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করে আজ রাতেও দিল্লির একাধিক সীমান্তে কাটাচ্ছেন হাজার-হাজার চাষি।