টাইফুন 'ইয়াগি'র দাপটে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্রকৃতির রোষে গৃহহারা মায়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ডের কয়েক লক্ষ মানুষ। ইয়াগির কোপে উপদ্রুত অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৪০০-রও বেশি মানুষের।
সরকারি হিসাব বলছে, এখনও পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২৯২ এবং মায়ানমারে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ অসংখ্য। ফলে, আগামী দিনে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কার করা হচ্ছে।
সপ্তাহ খানেক আগে উপরোক্ত চারটি দেশে দাপট শুরু করে ইয়াগি। প্রবল বেগে হাওয়া ও সেইসঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টি - এই দুইয়ের দাপটে বন্য়ার কবলে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সমস্যা আরও বাড়ায় লাগাতার ঘটতে থাকা ভূমিধস।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, প্রথমে ঘূর্ণিঝড় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ইয়াগি। চিনের হায়নান দ্বীপের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আরও শক্তি সঞ্চয় করে সেটি সুপার টাইফুনে পরিণত হয়। যার কবলে পড়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট থেকে ভিয়েতনামের কুয়াং নিন্হ প্রদেশ এবং ফোং শহরে ভূমিধস শুরু হয়।
সুপার টাইফুন ইয়াগি এবং তার পরবর্তী লাগাতার ধ্বংসলীলার জেরে উত্তর ভিয়েতনামে এখনও পর্যন্ত বহু লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে চলতি বছর ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ইয়াগি তার শক্তি হারিয়ে একটি ক্রান্তীয় নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করলেও তার প্রভাবে অঝোরে বৃষ্টি চলছেই। ফলে রাজধানী হ্যানয়-সহ ২৬টি প্রদেশ প্লাবিত হয়ে বিপদে পড়েছে।
মায়ানমারের জুন্টা সরকার জানিয়েছে, ইয়াগির কোপে পড়ে এখনও পর্যন্ত ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি ঘরছাড়া মানুষ অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকেই বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী থেকেছে মায়ানমার। কিন্তু, এবারের মতো বিপদে পড়েনি কখনও। তাই, কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্য চেয়েছে জুন্টা সরকার। জবাবে ভারতের তরফে ১০ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে শুকনো খাবার, পোশাক ও ওষুধ রয়েছে।
অন্যদিকে, এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে থাইল্য়ান্ডও। প্রবল বন্যা ও ভূমিধসে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। তথ্য বলছে, মায়ে সাই-এ গত ৮০ বছরে এত ভয়াবহ বন্যা হয়নি। ইতিমধ্যেই উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগের জেরে চিয়াং রাই বিমানবন্দর থেকে উড়ান পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম, লাওস এবং মায়ানমারে ত্রাণের কাজ চালাতে 'অপারেশন সদ্ভাব' শুরু করেছে ভারত সরকার। শুধুমাত্র ভিয়েতনামের জন্যই দেওয়া হচ্ছে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের সাহায্য।