আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নবনিযুক্ত বিদেশ সচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। তবে সেই কথাবার্তার বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু বলেননি জয়শংকর। গতকাল ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন জয়শংকর। সেই সময়ই ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জানান, পড়শি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। উল্লেখ্য, মার্কিন সফরকালে মার্কো রুবিওর পাশাপাশি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জয়শংকর। এছাড়া কোয়াডের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জয়শংকর। (আরও পড়ুন: নাক কাটল পাকিস্তানের, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পর্দা ফাঁস করে রিপোর্ট 'বন্ধু' তালিবানের)
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে হামাসের হামলায় 'ক্ষতি' হয়েছে আমাদের, বিস্ফোরক ইরানের শীর্ষস্থানীয় নেতা
এর আগে পদে আসীন হয়েই মার্শা বার্নিকাটকে বাংলাদেশ নীতির প্রধান পরিকল্পনাকারীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনিতেই আমেরিকায় একটি সরকারের বদল ঘটলে আমলাদের বদলির ঘটনা স্বাভাবিক। তবে এই বার্নিকাটকে বদলির নেপথ্যে অনেক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞই একটি 'বার্তা' খুঁজে বেড়াচ্ছেন। উল্লেখ্য, এর আগে হাসিনা সরকারের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। হাসিনা বারবার আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এদিকে হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের সরকারের মাথায় বসেছেন 'ক্লিনটন ঘনিষ্ঠ' ইউনুস। আর এই আবহে অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশে পালাবদলের নপথ্যে হাত ছিল আমেরিকার। যদিও আমেরিকা সেই কথা স্বীকার করে না। সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে থাকা জেক সালিভানও ভারত সফর শেষে দাবি করেছিলেন, দিল্লির সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে যে ভারত মনে করে না যে ঢাকার ঘটনায় ওয়াশিংটনের হাত রয়েছে। এই জটিলতার মাঝেই আমেরিকার বাংলাদেশ নীতি নির্ধারকের পদ থেকে অপসারিত হন বার্নিকাট। (আরও পড়ুন: ঊষা ভান্সের ধর্ম কী? তিনি কোন দেশের নাগরিক? জবাবের খোঁজে হন্যে মার্কিনিরা)
এই বার্নিকাট একটা সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আর এখন তিনি আমেরিকার বিদেশ দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল। বার্নিকাট নিজে পেশাদার কূটনীতিক। তিনি ডেমোক্র্যাট ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তবে এর আগে রিপাবলিকান জমানাতে (জর্জ ডাব্লু বুশের আমলে) সেনেগালের রাষ্ট্রদূতের পদ সামলেছিলেন তিনি। এহেন বার্নিকাটকে পদত্যাগ করতে বলে বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প নীরবে বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে নির্বাচনের প্রাক্কালে দিওয়ালি উপলক্ষে বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তিনি লিখেছিলেন, 'অশান্ত বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখানে লুঠপাট চলছে। আমি এর তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। আমি ক্ষমতায় থাকলে, এমন কখনও হত না। (আরও পড়ুন: সেক্সে 'হ্যাঁ' মানে কি গোপন মুহূর্তের ভিডিয়ো করারও সম্মতি? কি বলল হাই কোর্ট?)
এদিকে মহম্মদ ইউনুস 'ট্রাম্প বিরোধী' হিসেবেই পরিচিত। মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে তিনি অস্বস্তিতে আছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মদম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সুসম্পর্কের কথা অনেকেই জানেন। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প জেতার পরে প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে ইউনুস বলেছিলেন, 'ট্রাম্পের এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে। তা যেন আমাদের গ্রাস না করে, আত্মশক্তিকে দুর্বল না করে দেয়।' আর পরে যখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিল, তখন নাকি ইউনুসের নাম না নিয়েই ট্রাম্প বলেছিলেন, 'ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।' উল্লেখ্য, সেবার ট্রাম্প হারিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে। আর ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে মার্কিন সফরে গিয়েও বিল ক্লিনটনের ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস। সেখানে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের 'মাথা'কে চিনিয়ে দিয়েছিলেন ইউনুস। এই সবের মাঝে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কি হয়, সেদিকে নজর সবার। আর তার মাঝেই মার্কো রুবিওর সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে জয়শংকরের 'আলোচনার বিষয়বস্তু' নিয়ে কৌতুহল চরমে।