বিদায়কালে বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার তেলের ওপর নতুন করে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই আবহে ভারতে কি জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে? এই প্রশ্নই ঘুরঘুর করছিল অনেকের মনে। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকেই রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল আমদানি বেড়েছে অনেকটাই। এই আবহে রুশ তেলের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রশ্ন করা হয় ইন্ডিয়ান অয়েলের চেয়ারম্যান অরবিন্দর সিং সাহানিকে। জবাবে ইন্ডিয়ান অলেল প্রধান 'অভয়' প্রদান করলেন দেশবসীকে। (আরও পড়ুন: জাহাজে করে শহরে এল মেট্রোর নতুন দু'টি ডালিয়ান রেক, আছে কী কী ফিচার?)
আরও পড়ুন: আরজি করের বেঞ্চে শুয়ে ছিল 'রহস্যময়', ২ রাত আগেও নির্যাতিতার কাছে যায় এক মত্ত
ড্যাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফাঁকে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে ইন্ডিয়ান অয়েল প্রধান বলেন, 'রুশ জ্বালানি তেলের ওপর আর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও ভারতের চাহিদায় কোনও প্রভাব পড়বে না। আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম ৭৫ থেকে ৮০ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকবে।' এদিকে যদি কোনও কারণে যদি রুশ জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়, সেই ক্ষেত্রেও বিকল্প উৎস থেকে ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে দাবি করলেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দর সিং সাহানি। এরই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ভারতীয় জ্বালানি খাতের জন্যে ইতিবাচক হবে। (আরও পড়ুন: ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমছে হু হু করে,পড়শি বাংলাদেশের পকেটে এখন কত ডলার?)
আরও পড়ুন: আদানির চাপে চোখে অন্ধকার, আঁধার মেটাতে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে $৩ কোটির ঋণ বাংলাদেশের
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই রাশিয়ান তেল উৎপাদক কোম্পানি গ্যাজপ্রম এবং সারগুতনেফতেগ্যাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়া তেল বহনকারী ১৮৩টি জাহাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার তেল রফতানিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। (আরও পড়ুন: ৪ দশক আগে ভারতের অর্থনীতিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান ছিল বাংলার? আজ কোথায় রাজ্য?)
আরও পড়ুন: নিম্নবিত্তদের খরচ কমছে না মূল্যস্ফীতিতেও, নেপথ্যে কি নানা সরকারি প্রকল্প?
উল্লেখ্য, রাশিয়া থেকে জ্বালানি নিয়ে তা পরিশোধিত করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে ভারতীয় সংস্থাগুলি। এহেন পরিস্থিতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতীয় ঘরোয়া বাজারে সেই অর্থে কোনও প্রভাবই পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া হামলা চালাতেই কড়া পদক্ষেপ করেছিল আমেরিকা। রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তারা। তবে আন্তর্জাতিক ভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। এই আবহে ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনতে থাকে। কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে ভারতের ওপর বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ আসতে থাকে। রাশিয়া থেকে তেল কিনতে বারণ করা হয়েছিল দিল্লিকে। তবে ভারত নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছিল। (আরও পড়ুন: বিরোধ অল্টম্যানের সঙ্গে, তাই ট্রাম্পের ঘোষিত $১০০ বিলিয়নের প্রকল্পকে হেয় ইলনের?)
আরও পড়ুন: হোঁচট খেলেন ট্রাম্প, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্দেশিকায় আদালতের স্থগিতাদেশ
ক্রমেই রাশিয়া থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভারতে পরিশোধিত হয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের বন্দরে গিয়ে পৌঁছত। এছাড়া ওপেকভুক্ত দেশগুলির থেকে রাশিয়ার তেলের দাম অনেকটাই কম ছিল। এই সব সমীকরণ মিলিয়ে ভারত ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ২৫ বিলিয়ন ডলার বাঁচায় ভারত। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত ১৫৭.৫ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনেছিল রাশিয়া থেকে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। তা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে ভারত গত অর্থবর্ষে ১৩২.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে বলে জানা গিয়েছে। ভারত ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২৩২.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সেই পিমাণটা ছিল ২৩২.৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, গত অর্থবর্ষে ভারত আরও সস্তায় জ্বালানি তেল কিনতে সক্ষম হয়েছিল রাশিয়ার থেকে। এর ফলে ভারত ১৬ শতাংশ টাকা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল। এই আবহে রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল কেনার জন্য ভারত দুই বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয় রিপোর্টে।