অনিশা দত্ত
ইতিমধ্যে রেলের আটটি প্রধান ক্যাডারকে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসের আওতায় আনার সিদ্ধান্তে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এবার সংস্থাকে আরও ছোটো করার পরিকল্পনা হিসেবে একাধিক জুনিয়র এবং মিড-লেভেল পদকে মিশিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে রেল। এমনই জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
সব জোনের সুপারিশের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্টস, কমার্শিয়াল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকনিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্য়াল, পার্সোনেল, অপারেটিং, স্টোর এবং সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন দফতর-সহ আরও মিসলেনিয়াস পদকে মিশিয়ে দেওয়ার একটি খসড়া তৈরি করেছে রেল।
খসড়া অনুযায়ী, কমার্শিয়াল দফতরের টিকিট চেকিং, রিজার্ভেশন এবং অনুসন্ধানের সব মিশিয়ে দেওয়া হবে। স্টেশনে টিকিট পরীক্ষার দায়িত্ব রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের (আরপিএফ) কনস্টেবলদের দেওয়া হতে পারে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ সূচি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ক্য়াটেগরি নির্ধারণ করা হতে পারে।’
রেলের দুটি জোন আবার গার্ড এবং লোকো পাইলটের ক্যাটেগরিকে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের মতো টিকিট প্রক্রিয়ারও সুপারিশ করেছে ওই দুটি জোন। অ্যাকাউন্টস দফতরের ক্ষেত্রে জোনগুলির তরফে বলা হয়েছে, ‘বেতন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার কাজ এবং দেওয়ার কাজ একটাই দফতরের মাধ্যমে করা যেতে পারে। পেনশনের দিকটি যেমন ব্যাঙ্ক দেখভাল করে, বেতনও সেইভাবে দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র কর্মীবর্গ এবংঅ্যাকাউন্টস দফতরের সুপারভাইজর কর্মী ছাড়া সব ক্য়াটেগরির অবলুপ্তি করা উচিত।’ পাশাপাশি জোনগুলি সাফাইকর্মী-সহ দক্ষতাহীন কাজের ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের সুপারিশ করেছে।
কাঠামোগত সংস্কার এবং ছোটো করার জন্য গত বছর ডিসেম্বরে রেল বোর্ডের বহর আট থেকে কমিয়ে চার করার সিদ্ধান্তে সবুজ সংকেত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ দফতরের সঙ্গে আলোচনার পর রেল মন্ত্রক সেই সার্ভিসের নিয়কানুন এবং একত্রীকরণের কাজ করবে। এক বছরের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তারপর যে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হবে, সেগুলি চূড়ান্ত করবে আট সদস্যের একটি কমিটি। যা গত মাসে গঠিত হয়েছে। বোর্ডের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রাজীব গৌবার নেতৃত্বে একটি সচিবগোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান, কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ দফতরের সচিবও রয়েছেন। সেই সচিবগোষ্ঠী আবার মন্ত্রিগোষ্ঠীকে সহায়তা করবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সেই মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠিত হবে।
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি রেল মন্ত্রকের মুখপাত্ররা। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে এক রেল আধিকারিক বলেন, ‘সংস্থাকে আরও কার্যকরী করে তোলাই পরিকল্পনা। ১.৩ মিলিয়ন (১৩ লাখ) কর্মী অত্যন্ত বেশি এবং কম কার্যকরী। বৃহৎভাবে বলতে গেলে এটা লোকবল কমানোর জন্য।’
পাশাপাশি সাতটি মেডিক্যাল ক্যাডারকে মিশিয়ে চারটিও করতে পারে জাতীয় পরিবহন সংস্থা। শুধু ল্যাবরেটরির কর্মী, ফার্মাসিস্ট এবং নার্সিং কর্মীদের রেখে বাকি ক্যাটেগরির কর্মীদের আউটসোর্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে দুটি জোন। নাম গোপন রাখার শর্তে অপর এক রেলকর্তা বলেন, ‘বৃহৎভাবে লোকবলকে কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা (রেল)। যেহেতু উঁচু পদের ক্যাডারদের ক্ষেত্রে সেই কাজটা হয়ে গিয়েছে, এটা বেশি সমস্যার হবে না।’
বিষয়টি নিয়ে রেল বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিবেক সহায় বলেন, ‘আমি বরাবরই বলেছি, একটির পরিবর্তে দুটি সার্ভিস থাকা উচিত। যখন আপনি টেকনিক্যাল দফতরের কর্মীদের নন-টেকনিক্যাল কাজ করতে বলবেন, তখন একটি সার্ভিস সমস্যা তৈরি করবে। কারণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তাঁদের সব শিক্ষা এবং বিশেষত্ব জলে যাবে।’