মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসা ইস্যুতে নতুন ঘোষণায় একপ্রকার দিশেহারা হাজার হাজার ভারতীয়। তিনি হঠাৎই ঘোষণা করেন, এইচ-১বি ভিসার জন্য ১ লক্ষ ডলারের ফি ধার্য হবে। এরপরেই ভারতীয়দের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বিদেশে থাকা কর্মীদের তড়িঘড়ি ই-মেল করে জানায়, দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে হবে। তবে শুধু ভারতীয় কর্মীরা নন বিশেষ করে দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এইচ-১বি ভিসার উপর চাপ এবং অভিবাসন নীতির কঠোরতা দেশের অনেক পরিবারকে চিন্তায় ফেলেছে। বিয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয়দের পছন্দ করার ব্যাপারে এখন অনেকেই দ্বিধায় পড়ছেন, কারণ চাকরি হারানো বা ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতেন হরিয়ানার ১৯ বছরের মেডিকেল পড়ুয়া সিদ্ধি শর্মা। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির খবরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি। সিদ্ধি বলেন, 'আমি সব সময়ই ভেবেছিলাম বিয়ের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হবো। কিন্তু ট্রাম্প যেন আমার স্বপ্নের দরজাই বন্ধ করে দিয়েছেন।' এই প্রসঙ্গে 'ভোস ফর ইটারনিটি' নামে একটি ম্যাচমেকিং সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা অনুরাধা গুপ্তা বলেন, অভিবাসন নীতির সিদ্ধান্ত হয় ওয়াশিংটনে, কিন্তু তার প্রভাব পড়ে ভারতের প্রতিটি ডিনার টেবিলে, যেখানে বিয়ের আলোচনা চলে। ভারতে বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবারগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও লাভ ম্যারেজের চল বাড়ছে, তবুও এনআরআই-বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাত্র-পাত্রীর ব্যাপারে আগ্রহ ছিল সব সময় বেশি।
২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া এইচ-১বি ভিসার ৭৫ শতাংশই ভারতীয় পুরুষদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন নীতিতে এই ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২১ লক্ষ প্রবাসী ভারতীয় রয়েছেন, যারা একসময় ভারতে বিয়ের জন্য প্রবল আগ্রহী ছিলেন।০ কিন্তু ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসা সংস্কার, তাঁদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বনজা রাও কুইক ম্যারেজেসের প্রতিষ্ঠাতা বনজা রাও বলেন, 'গত বছর পর্যন্ত বিদেশে থাকা পাত্রদের জন্য অনেক চাহিদা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণে গত ছয় মাসে সেই আগ্রহ অনেকটাই কমে গিয়েছে।' তিনি জানান, অনেকে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ এমন প্রস্তাব বাতিলও করছেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রভাব
ট্রাম্পের ভিসা উপর বিধিনিষেধ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা ও স্থায়ী হওয়ার ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪.২২ লক্ষ ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু অভিবাসন নীতির অনিশ্চয়তা এবং কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক হর্ষিতা ইয়ালামার্টি বলেন, প্রতিবার যখনই এইচ-১বি ভিসার কড়াকড়ি বা সীমাবদ্ধতার কথা ওঠে, তখনই সেটা সরাসরি ভারতীয় বিয়ের বাজারে প্রভাব ফেলে। তিনি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আগের প্রশাসনেও এই ভিসা নিয়ে কঠোরতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে প্রস্তাব ছিল এই ভিসাধারীদের স্ত্রীদেরও কাজ করার অনুমতি থাকবে না। পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে সেই নীতিটি প্রত্যাহার করেন।