আর কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যেই এইচ-১বি ভিসা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে মার্কিন মুলুকে। আর এসবের মধ্যেই সেদেশে কর্মরত ভারতীয়রা ঘোর বিপাকে পড়েছেন বা পড়তে চলেছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কেন বলা হচ্ছে একথা?
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইলন মাস্ক যতই আমেরিকায় দক্ষ বিদেশিদের চাকরি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করুন না কেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরলেই ভিসা নীতি আরও কঠোর করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কারণ, যাঁরা তাঁকে ভোটে জিতিয়ে ফের একবার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বসিয়েছেন, সেই আম-মার্কিন ভোটারদের একটা বড় অংশই মনে করেন, ভারতীয়-সহ অন্যান্য বিদেশিরা তাঁদের কাজের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছেন।
যার ফলস্বরূপ ট্রাম্প যখনই কোনও উঁচু পদে কোনও ভারতীয়কে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, এইচ-১বি ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি কঠোর করাটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মহলের দাবি, ইতিমধ্যেই পালাবদলের নেতিবাচক ফল ভোগ করতে শুরু করেছেন ভারতীয়রা। অনেকে কাজের সুযোগ পেয়েও কাজে যোগ দিতে পারছেন না। কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটিই হয়তো অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে।
কেউ আবার চাকরির অফার পাওয়ার পরও সেই অফার ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকেই চাকরির সুযোগ পেলেও ভিসা পাচ্ছেন না। এই সমস্ত লক্ষণগুলি মার্কিন মুলুকে কাজ করা ভারতীয়দের জন্য মোটেও শুভ নয় বলেই মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
বিপাকে ভারতীয় পেশাদাররা:
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকা ও হায়দরাবাদের আটজন ভারতীয় পেশাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনকে চাকরির অফার দেওয়ার পরও তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারণ, হিসাবে দেখানো হয়েছে - 'ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা'।
এঁদের মধ্যে একজন হলেন, হায়দরাবাদের বাসিন্দা পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র বৈষ্ণবী পুভ্ভাদা। গত ডিসেম্বর মাসে আমেরিকার একটি নামজাদা প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পান তিনি।
এই সুখবর পাওয়ার পর সানফ্রান্সিস্কোয় গিয়ে থাকার ব্যবস্থা শুরু করে দেন বৈষ্ণবী। কিন্তু, তারপর হঠাৎই তিনি জানতে পারেন, তাঁকে দেওয়া চাকরির অফার সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
সবথেকে শোচনীয় বিষয় হল, আমেরিকায় চাকরি পাওয়ার পর বৈষ্ণবী তাঁর বর্তমান কাজের জায়গায়তেও ইস্তফা দিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ - তাঁর একূল-ওকূল, দু-কূলই গেল!
২৮ বছরের ওই তরুণী জানিয়েছেন, '২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি চাকরি পাই। আমাকে লিখিতভাবে সেই বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। সেই কারণেই আমি আমার বর্তমান চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলাম।'
সংশ্লিষ্ট সংস্থা বৈষ্ণবীকে জানায়, 'ভিসা নীতিতে পরিবর্তন' আসতে পারে। এটা মাথায় রেখেই তারা তাঁকে দেওয়া চাকরির অফার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
বৈষ্ণবী বলেন, 'আমার মনে হচ্ছে, আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আপনারা যদি ভিসা দিতে পারা নিয়ে নিশ্চিত না হন, তাহলে চাকরির অফার দিলেন কেন? ওঁরা বলছেন, একবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসুন। ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। তখন যদি বিষয়টি মিটে যায়, তাহলে ওঁরা আবার আমাকে অফার লেটার পাঠাবেন। কিন্তু, আমি কত দিন তার জন্য অপেক্ষা করব?'
মার্কিন প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, আমেরিকা যত পরিমাণ এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন করে, তার সিংহভাগই থাকে ভারতীয়দের কাছে। যেমন - ২০২৩ সালে মোট যত জনকে এই ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ভারতীয় ছিলেন প্রায় ৭২ শতাংশ। ফলত, এই ভিসার নিয়ম কঠোর হলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হবেন ভারতীয়রাই।