তখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশের জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তাতে ক্রমশ ভারত আধিপত্য বিস্তার করছে। সেই অবস্থায় ১৯৭১ সালে আজকের দিনেই ভারতের প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি যুদ্ধবিমান এইচএফ-২৪ মারুত গুলি করে নামিয়েছিল পাকিস্তান বায়ুসেনার এফ-৮৬ সাবের ফাইটার জেটকে। রাজস্থান সেক্টরে যখন এইচএফ-২৪ মারুত নিজের প্রথম ‘কিল’ (গুলি করে নামিয়েছিল) করেছিল, তখন সেই যুদ্ধবিমান ওড়াচ্ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার কেকে বক্সি। আর ২০২৪ সালে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার ৫৩ বছর পূর্তি হল। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পাশাপাশি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে মারুত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তিনজন মারুত পাইলটকে বীরচক্রে ভূষিত করা হয়েছিল।
মারুতের প্রথম উড়ান
এইচএফ-২৪ মারুত প্রথম উড়েছিল ১৯৬১ সালের ১৭ জুন। যে যুদ্ধবিমানের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং হ্যাল। মারুতকে শব্দের দ্বিগুণ গতি সম্পন্ন করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও সেটা পূরণ হয়নি। গতির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকায় মূলত 'গ্রাউন্ড অ্যাটাক' মিশনে ব্যবহার করা হত মারুতকে। যেরকম ভাবা হয়েছিল, সেরকম মিশনে অবশ্য এইচএফ-২৪ মারুতকে ব্যবহার করা যায়নি।
মারুতের কী কী সমস্যা হয়েছিল?
২০২১ সালে 'হিন্দুস্তান টাইমস'-র সাক্ষাৎকারে হ্যালে মারুতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা প্রদ্যুত দাস জানিয়েছিলেন, সেই যুদ্ধবিমানের প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু একাধিক কারণে তা পূরণ করা হয়নি। তাঁর মতে, প্রথমেই শব্দের দ্বিগুণ গতিকে 'টার্গেট' না করে সহজ-সরল একটা যুদ্ধবিমান তৈরির দিকে মনোনিবেশ করা উচিত ছিল। ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শেখানো হয় যে কীভাবে সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। বড় কোনও কিছু তৈরির করার জন্য যে স্বপ্ন দেখা হয়, সেটা শেখানো হয় না। তবে হ্যাঁ বিদেশি বিমান কেনার উপরে নজর দেওয়ার পরিবর্তে যদি আমরা এই প্রকল্পে বেশি সহায়তা প্রদান করতাম, তাহলে আরও সাফল্য মিলত।’
মারুতের প্রেমে মুগ্ধ ছিলেন পাইলটরা
তবে সেইসবের মধ্যেই যে পাইলটরা মারুত উড়িয়েছিলেন, তাঁরা সেই যুদ্ধবিমানের প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ২০১১ সালে বেঙ্গালুরুতে মারুত পাইলটদের সাক্ষাৎ-পর্বে তাঁরা সেই গর্বের যুদ্ধবিমানের উইং কমান্ডার (অবসরপ্রাপ্ত) ব্রায়ান ডিমার্গি বলেছিলেন, 'যখন আমি প্রথমবার ওকে (মারুত) দেখেছিলাম, তখন আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ও মারাত্মক সুন্দর ছিল। ও যখন চলাফেরা করত, তখন ওকে কেউ চিহ্নিত করতে পারত না।'