আবার জেগে উঠেছে ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আন্দামান সাগরে ব্যারেন দ্বীপে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরি। গত ২০ সেপ্টেম্বর এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ঘুম ভেঙে জেগে উঠে। প্রবল বিস্ফোরণের জেরে আন্দামানে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে আশেপাশের এলাকায় কোনও বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।এই নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয়বার সক্রিয় হল আগ্নেয়গিরিটি।
আরও পড়ুন-বড় শাস্তির খাঁড়া! ক্রিকেট থেকে US-কে নির্বাসিত করলেন জয় শাহ, কারণ কী?
ব্যারন দ্বীপে আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ সেই দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে নৌসেনার তরফে। নৌসেনার জাহাজ থেকে তোলা সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসছে লাভা ও ধোঁয়া। দাবি করা হচ্ছে, চলতি মাসে দ্বিতীয় দফার স্ট্রম্বোলিয়ান ধরনের অগ্নুৎপাত ঘটেছে। যার ফলে অল্পমাত্রায় লাগাতার লাভা ও ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় আগ্নেয়গিরিটি থেকে। এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে। কোনও রকম সতর্কতা জারি করা হয়নি প্রশাসনের তরফে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, ব্যারেন দ্বীপের আগ্নেয়গিরির প্রথম অগ্ন্যুৎপাত হয় প্রায় ১৬ লক্ষ বছর আগে। এরপর দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার পরে আবার সক্রিয় হয় আগ্নেয়গিরিটি। খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার বছর আগেও আগ্নেয়গিরিটি বেশ সক্রিয় ছিল। এর পরবর্তী সময়কালটিতে দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার পর আগ্নেয়গিরিটি আবার জেগে ওঠে ১৭৫৭ সালে। তবে ১৮৫২ সালের পর দীর্ঘদিন কোনও অগ্ন্যুৎপাত না হলেও প্রায় ১৫০ বছর পর, ১৯৯১ সালে আবার জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরিটি। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই লাভা ও ছাই উগরাচ্ছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও সক্রিয় হয় এটি।
আরও পড়ুন-বড় শাস্তির খাঁড়া! ক্রিকেট থেকে US-কে নির্বাসিত করলেন জয় শাহ, কারণ কী?
ব্যারেন দ্বীপ আসলে এক আগ্নেয় দ্বীপ, যা সম্পূর্ণভাবে আগ্নেয়গিরির উপাদানে তৈরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩৫৪ মিটার। মানুষের বসতি না থাকলেও এখানে বন্যপ্রাণী এবং পাখিদের অবাধ বিচরণভূমি। এই আগ্নেয়গিরিটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ জনিত সাবডাকশন জোনে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় প্লেট বার্মা প্লেটের নিচে প্রবেশ করছে। সেই চাপ থেকেই ম্যাগমা উপরে উঠে আসে এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, যদিও এই অগ্ন্যুৎপাতগুলি আপাতত ক্ষতিকর নয়, তবে ছাই এবং গ্যাস কাছাকাছি সামুদ্রিক প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া বিমান চলাচলের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভূতাত্ত্বিক দফতর (জিএসআই) নজরদারি চালাচ্ছে। ভারতের কাছে ব্যারেন দ্বীপ শুধু একটি আগ্নেয় দ্বীপ নয়, বরং প্রকৃতির শক্তির প্রতীক। জনবসতিহীন ও বন্ধ্যা হলেও এই দ্বীপ বিজ্ঞানীদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র। বন দফতরের বিশেষ অনুমতি নিয়ে, দূর থেকে ব্যারেন দ্বীপের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটিকে কিন্তু দেখে আসা যায়। জনশূন্য, প্রায় রুক্ষ, পাথুরে দ্বীপটির প্রতিকূল পরিবেশে এখনও কিছু পাখি, বাদুড়, ইঁদুর ও ছাগলের দেখা মেলে। যদিও কাউকে দ্বীপটিতে নামার অনুমতি দেওয়া হয় না।