একটা সময় ছিল, যখন তিনি মরা মানুষের দেহাংশ ছিঁড়ে খেতেন! আর এখন সেই তিনিই কিনা সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর! সূত্রের দাবি, ঠিক এভাবেই নিজেকে 'রিব্র্যান্ডিং' করেছেন ইন্দোনেশিয়ার একদা কুখ্যাত ওই বাসিন্দা।
যাঁর কথা এখানে বলা হচ্ছে, তাঁর নাম সুমান্ত। বয়স প্রায় ৫২ বছর। ২০০৩ সালে প্রথমবার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। সেই সময়েই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারণ, পূর্বালিঙ্গা অঞ্চলে সুমান্তর বাড়ি থেকেই এক প্রবীণের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ওই প্রবীণের দেহ একটু একটু করে খাচ্ছিলেন সুমান্ত! এমনকী, দেহের অবশিষ্ট অংশও খাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তারও আগে স্থানীয় একটি আখের ক্ষেতে দুই মৃত মানুষের দেহ খেয়ে ভোজ সেরেছিলেন সুমান্ত!
নরখাদক ও কালো জাদু:
প্রায় ২২ বছর আগের সেই ঘটনায় চারিদিকে হইচই পড়ে গিয়েছিল। পুলিশের দাবি, জেরায় সুমান্ত তাদের জানিয়েছিলেন, তিনি ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুতে বিশ্বাস করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের মাংস ভক্ষণ করলে তা তাঁকে অপরিসীম অলৌকিক শক্তি প্রদান করবে!
যদিও পুলিশের বক্তব্য ছিল, পুরোটাই আসলে ভাঁওতা। তাদের যুক্তি ছিল, নিজের গর্হিত অপরাধ আড়াল করতেই ব্ল্যাক ম্যাজিককে শিখণ্ডী করছেন সুমান্ত।
কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এমন এক ভয়াবহ অপরাধের পরও ইন্দোনেশিয়ার আদালত সুমান্তকে মাত্র তিনবছরের জন্য কারাবাসের সাজা দেয়। সেই সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁকে আইনত মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু, সমাজ তাঁকে আর কোনও দিনই গ্রহণ করেনি। স্থানীয় মানুষজন তাঁকে চিরকালের মতো সামাজিক বয়কট করে।
সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর হিসাবে 'পুনর্জন্ম' :
সুমান্ত জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাও প্রায় দুই দশক হতে চলল। আর এখন ফের একবার তিনি আলোচনায় উঠে এসেছেন। নেপথ্যে রয়েছে সোশাল মিডিয়া। তাঁর একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল (Sumanto Gereng Reborn) রয়েছে। যার নাম দেখলেই বোঝা যাবে, তিনি নিজেও মনে করেন, সুমান্ত গেরেং হিসাবে দ্বিতীয়বার জন্মলাভ করেছেন তিনি!
সুমান্তর এই প্রোফাইলে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। সেই প্রোফাইলে নানা কাণ্ড-কারখানা করেন একদা এই নরখাদক! রোজের জীবনে মানুষ যাতে ভালোভাবে বেঁচেবর্তে থাকতে পারে, তার জন্য 'অনুপ্রেরণাদায়ী বাণী' শোনান তিনি। নানা ঘটনা নিয়ে মিম তৈরি করেন। সবটাই করেন নিজের মাতৃভাষায়।
সবথেকে বড় কথা, ফলোয়াররা তাঁকে এসব করতে দেখে মজাও পান। সুমান্ত মাঝেমধ্যে নিজের খাওয়ার (অবশ্যই মানুষের মাংস নয়) ভিডিয়োও পোস্ট করেন।
কীভাবে হল এই ভোলবদল?
সুমান্তর এই পরিবর্তন অনেকেই খুব ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্য়া করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, একজন মানুষ - যিনি অতীতে অন্য মরা মানুষের মাংস খেতেন, তিনি যেভাবে সোশাল মিডিয়ার সাহায্যে সমাজের মূল স্রোতে ক্রমশ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন, সেটা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। এর ফলে অন্য অতীত অপরাধীরাও নিজেদের শোধরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান ডা. মূল্যাশ্রী জানিয়েছেন, একটি কর্মসূচির ব্র্যান্ড অ্য়াম্বাস্যাডর হওয়ার জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সুমান্তকে আহ্বান জানানো হয়। তিনি তাতে রাজি হন। তারপরই তাঁর নামে একটি সোশাল মিডিয়া অ্য়াকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। তাতে মানুষজন ভালোই সাড়া দেয়। আর সেই থেকেই অতীতের নরখাদকের নতুন জীবন শুরু হয়।