আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই উপলক্ষে জানুন এমন কয়েকজন ভারতীয় মহিলা বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে, যাঁরা নিজের, দেশের এবং নারীজাতির নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল করেছেন।
১. বিভা চৌধুরী (১৯১৩-১৯৯১)
এক ভারতীয় মহিলার নামের তারা যে মহাকাশে উজ্জ্বল তা কী জানেন? তাঁর নাম বিভা চৌধুরী। কলকাতার পদার্থবিদ বিভা চৌধুরী প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি কসমিক রশ্মি এবং পার্টিকেল ফিজিক্সের উপর গবেষণা করেছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনমিকাল ইউনিয়ন তাঁর কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে HD 86081 নামক তারাটির নামকরণ করে - 'বিভা'। টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের তিনিই প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী।
২. ড: গগনদীপ কাঙ্গ (১৯৬২-)
তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা বিজ্ঞানী যিনি দ্য রোয়াল সোসাইটিতে ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপিকা ছিলেন গগনদীপ কাঙ্গ। পাশাপাশি তিনি একজন ভাইরোলজিস্টও ছিলেন। বাচ্চাদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ইনফেকশান বিষয় গবেষণা করেছিলেন তিনি।
৩. কমলা রানাদিভে (১৯১৭-২০০১)
১৯৮২ সালে মেডিসিনে পদ্মভূষণে সম্মানিত কমলা রানাদিভে ক্যানস্যার গবেষণার ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি প্রথম একজন, যিনি ক্যানস্যার সংবেদনশীলতা ও ভাইরাসের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। ব্রেস্ট ক্যানস্যার ও বংশগতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উপর তাঁর রিপোর্টটি এই রোগকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিল। ইন্ডিয়ান ক্যানস্যার রিসার্চ সেন্টারে তাঁর দৌলতেই দেশের প্রথম টিস্যু কালচার রিসার্চ ল্যাব স্থাপিত হয়।
৪. ড: টেসি থমাস (১৯৬৩-)
এরোস্পেস বিজ্ঞানী ড: টেসি থমাসই প্রথম মহিলা যিনি ভারতের মিসাইল প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ‘ভারতের মিসাইল উইমেন’ নামে পরিচিত। তিনি অগ্নি ৪ মিসাইলের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন। শুধু তাই নয় পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাকাডেমিস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্সেও সম্মানিত।
৫. অসীমা চট্টোপাধ্যায় (১৯১৭-২০০৬)
তিনিই প্রথম মহিলা যিনি কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ডক্টরেট অফ সায়েন্সের ডিগ্রি অর্জন করেছেন। জৈব রসায়নবিদ অসীমা চট্টোপাধ্যায় অ্যান্টি এপিলেপ্টিক ও অ্যান্টি ম্যালেরিয়ার মতো ওষুধ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মাদাগাস্কার পেরিউইঙ্কেল উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ভিনকা অ্যালকালয়েডসের উপর তাঁর গবেষণা কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
৬. ড: ঋতু করিধাল (১৯৭৫-)
‘রকেট উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ ড: ঋতু করিধাল ইসরোর অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের মার্স অর্বিটার মিশনে মঙ্গলযান তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আবার চন্দ্রযান ২ -এর মিশন ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি।
৭. কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৬২-১৯২৩) এবং আনন্দীগোপাল জোশী (১৮৬৫-১৮৮৭)
ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক ছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং আনন্দীগোপাল জোশী। কাদম্বিনী গাঙ্গুলি প্রথম দক্ষিণ এশীয়, যিনি পাশ্চাত্য ওষুধের শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। অন্যদিকে আনন্দীগোপাল জোশী প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেডিসিনে ডিগ্রি-সহ গ্র্যাজুয়েশন করেন।
৮. অদিতি সেন দে
তিনিই প্রথম মহিলা যিনি, পদার্থ বিজ্ঞানে অসাধারণ কাজের জন্য কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের তরফে শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার লাভ করেন। এলাহাবাদের হরিশ চন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপিকাও তিনি। কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন বিশেষত কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্টে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
৯. চন্দ্রিমা সাহা
পেশায় জীববিজ্ঞানী চন্দ্রিমা সাহা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির প্রথম মহিলা অধ্যক্ষ। আবার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজির প্রাক্তন ডিরেক্টর তিনি। কোষ জীববিজ্ঞান, বিশেষত কোষের মৃত্যু বিষয় গবেষণা ছিল তার স্পেশালাইজেশন। কালাজ্বর সম্পর্কে তাঁর গবেষণার রিপোর্ট উল্লেখযোগ্য।
১০. মঙ্গলা মণি
তিনি ইসরোর প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী, যিনি আন্টার্কটিকায় এক বছরেরও বেশি সময় (প্রায় ৪০৩ দিন) কাটিয়েছিলেন। তিনি সেই অভিযাত্রী দলের সদস্য ছিলেন, যা ২০১৬ সালে ভারতের আন্টার্কটিক রিসার্চ স্টেশন ভারতীতে গিয়েছিল।
১১. স্বাতী মোহন
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার স্বাতী মোহন ২০২০ সালে নাসার পারসিভেরান্স মিশনের গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশনসের (জিএন অ্যান্ড সি) প্রধান। আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছেন। তারপর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে এরোনটিক্স এবং অ্যাস্ট্রোনটিক্সে স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট করেন।