বিচারের নামে আবারও প্রহসন! ইসলামকে শিখণ্ডী করে কট্টরপন্থীদের তাণ্ডব! কারণ, তাদের ফতোয়ার পরোয়া না করেই এক শিল্পী সমগ্র বিশ্বের সামনে তাঁর শিল্পের প্রদর্শন করেছেন! আর, তাঁর এই 'দুঃসাহস' নজরে আসার পর থেকেই তেলেবেগুনে জ্বলছে কট্টরপন্থীরা। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, ওই তরুণী শিল্পীকে তাঁর এই 'বেআইনি' আচরণের ফল ভোগ করতে হবে!
এই ঘটনা ইরানের। সম্প্রতি সেখানকার নাগরিক ওই শিল্পী হিজাব না পরেই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আর, তারপরই তাঁর বিরুদ্ধে 'আইনি এবং ধর্মীয় মাপকাঠি লঙ্ঘন' করার অভিযোগ তুলেছে ইরানের বিচার বিভাগ। তাদের মতে, ওই তরুণী ইসলামপন্থী ওই দেশের কঠোর পোশাক বিধি লঙ্ঘন করে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছেন!
গত বুধবার গভীর রাতে ইউটিউবের মাধ্যমে ওই সঙ্গীতানুষ্ঠানে যোগ দেন পরস্তু আহমেদি। সেই অনুষ্ঠানে তাঁকে হিজাব পরতে দেখা যায়নি। বদলে তিনি একটি কালো রঙের অফ-শোল্ডার লং ড্রেস পরে গান গেয়েছেন। যা তাঁকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
সূত্রের দাবি, ওই ভিডিয়োটির শুটিং করা হয়েছিল ইরানেই। সেখানে সামনাসামনি কোনও দর্শক ছিলেন না। আহমেদির সঙ্গে ছিলেন কেবলমাত্র তাঁর চারজন পুরুষ সহকর্মী। তাঁরা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন।
এই ইউটিউব ভিডিয়োটির আগে ও পরে আহমেদির তরফে তাঁর দর্শকদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দেওয়া হয়। তাতে লেখা ছিল, 'আমি পরস্তু। আমি সেই মেয়ে, যে আর চুপ করে থাকতে পারছে না। এবং যে দেশকে সে ভালোবাসে, তার জন্য গান গাওয়া বন্ধ করতে সে আর রাজি নয়। এক কাল্পনিক অনুষ্ঠানে আমার এই সুর শুনুন। এবং একটি মুক্ত ও সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখুন।'
উল্লেখ্য, এই ইরানের মাটিতেই সেখানকার কুখ্য়াত নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে তরুণী মাহসা আমিনিকে নির্মমভাবে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল ইরান-সহ সারা বিশ্ব। আহমেদির একটি গানে সেই ঘটনার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
ইতিমধ্যেই ইরানের বিচারব্যবস্থার তরফে সেদেশের অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট মিজান-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, 'বিচার বিভাগ এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই শিল্পী এবং তাঁর প্রোডাকশন কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনত মামলা রুজু করা হচ্ছে।'
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি শাসন কায়েম হয়। তারপর থেকে ইরানের মহিলাদের প্রকাশ্য়ে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয় এবং প্রকাশ্য স্থানে মহিলাদের সঙ্গীত পরিবেশনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এদিকে, এরই মধ্য়ে ইরানে হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে পালন করার লক্ষ্য়ে এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ করেছে সেদেশের কট্টরপন্থী সরকার। অ্য়ামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুসারে, এবার থেকে ইরানের কোনও মহিলা যদি হিজাব না পরে ধরা পড়েন এবং বিচারে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে!