যুদ্ধবিরতি খারিজ করার পরেই ইউটার্ন ইরানের! আশার আলো মধ্যপ্রাচ্যে?

টানা ১২ দিনের সংঘর্ষের পর অবশেষে আশার আলো। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ইরানের বিদেশমন্ত্রী সেইয়েদ আব্বাস আরাঘচির এক পোস্টের পর। যদিও এর আগে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির দাবিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিলেন। এরমধ্যে ইজরায়েলের দাবি, মঙ্গলবার সকালে ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাতে তিন জনের মৃত্যুরও খবর মিলেছে।

পশ্চিম এশিয়ায় টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর, ‘সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির’ দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই ঘোষণা ঘিরে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান সেই দাবিকে পুরোপুরি অস্বীকার করে জানায়, কোন ধরনের যুদ্ধবিরতি বা সামরিক সমঝোতা হয়নি।কিন্তু চমক আসে তার পরেই। ট্রাম্পের ঘোষণাকে অসম্ভব ও ভিত্তিহীন বলার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই, ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এমন একটি বিবৃতি দেন, যা ইঙ্গিত দেয় সংঘর্ষে একটি অঘোষিত বিরতি হয়তো ঘটেই গিয়েছে। তিনি জানান, 'ইজরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে আমাদের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর শাস্তিমূলক অভিযান শেষ পর্যন্ত, অর্থাৎ ভোর ৪টা পর্যন্ত চালু ছিল। আমাদের বীর সেনারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দেশের প্রতিরক্ষা চালিয়ে যাবে, সে প্রতিজ্ঞায় তারা প্রতিটি হামলার জবাব দিয়েছেন।'

ঘটনাচক্রে এই পোস্টের কিছুক্ষণ আগেই আরও একটি পোস্ট করেছিলেন আরঘাচি। সেই এক্স বার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন, ইরানের পক্ষে আর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কোন আগ্রহ নেই, যদি ইজরায়েল তাদের ‘অবৈধ আগ্রাসন’ বন্ধ করে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, তেহরানের সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে যদি ইজরায়েল তাদের হামলা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইরান আর প্রতিক্রিয়া জানাবে না। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাতে তাঁর ট্রুথ অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘ইরান ও ইজরায়েল দু’পক্ষই তাঁদের শেষ মিশন সম্পন্ন করার পর আগামী ছ’ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।'ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে তাঁর ঘোষণার ছয় ঘণ্টা পর থেকে, অর্থাৎ ভারতীয় সময় সকাল ৯টা৩০ মিনিট থেকে। তিনি আরও জানান, প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু করবে ইরান এবং ১২ ঘণ্টা পরে তা অনুসরণ করবে ইজরায়েল। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাবে। ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইরান যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করে। তবে ইঙ্গিত দেয়, যদি ইজরায়েল তাদের আগ্রাসন বন্ধ করে, তবে ইরানও হামলা করা থেকে বিরত থাকবে।

যদিও ইজরায়েলের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালেও ইরান তাদের উপর হামলা চালিয়েছে।ইজরায়েল সেনার তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ‘কিছুক্ষণ আগে আইডিএফ ইরান থেকে ইজরায়েলের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। যে কোনও রকম হামলা প্রতিহত করতে আমাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে।’ অন্যদিকে, তেহরানেও ইজরায়েলের দিক থেকে মিসাইল ছোড়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।সূত্রের খবর, ইজরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জায়গায় সাইরেন বাজতে শোনা গিয়েছে। দক্ষিণের বেয়ারশেবাতে মিসাইল আছড়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি আরও একাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। হামলায় আশঙ্কায় ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর তরফে বাসিন্দাদের সুরক্ষিত জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইরানের রাজধানী তেহরানেও মঙ্গলবার ভোরে ইজরায়েলের তরফে মিসাইল ছোড়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, তেহরানের মধ্যাঞ্চলে আকাশে ব্যাপক কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গিয়েছে।