‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিতর্ক চলছে। তারইমধ্যে একটি মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানাল, ধর্ম নির্বিশেষে সঙ্গীর সঙ্গে জীবনযাপন হল মৌলিক অধিকার। জীবনযাপন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের আওতায় তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারবেন।
বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল এবং বিচারপতি পঙ্কজ নকভির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ধর্মান্তরের যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের উর্ধ্বে) তরুণীর ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা জানতে বাধ্য থাকবে আদালত। পূর্ববর্তী দুটি রায়ের প্রসঙ্গে উত্থাপন করে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘ভালো আইন তুলে ধরছে না।’
একজন হিন্দু মহিলা এবং মুসলিম পুরুষের পিটিশন শুনছিল হাইকোর্ট। তাঁরা মুসলিম মতে বিয়ে করেছিলেন। তা নিয়ে জবানবন্দীতে জানিয়েছিলেন, স্বেচ্ছায় তাঁরা মুসলিম মতে বিয়ে করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবেই এক বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকছেন। যদিও সেই ঘটনায় মহিলার বাবা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৬, ৩৫২ ও ৫০৬ ধারা এবং পকসো আইনের সাত এবং আট নম্বর ধারায় মামলা রুজু করেন। সেই এফআইআর খারিজ করে দেওয়ার জন্য পিটিশন দাখিল করা হয়। তাতে দাবি করা হয়, কু-মতলবে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শুধুমাত্র বৈবাহিক সম্পর্কে ইতি টানার লক্ষ্যেই এফআইআর করা হয়েছে বলে জানান আবেদনকারী। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, বিয়ের সময় দু'জনেই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। ফলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে তাঁদের।
দুটি পুরনো মামলায় (নুরজাহান বেগম মামলা এবং প্রিয়াংশী মামলা) হাইকোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন অভিযোগকারীর আইনজীবী রীতিশ কুমার সিং। সেখানে রায় দেওয়া হয়েছিল, বিয়ের জন্য ধর্মান্তরে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। সেই দুই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, কার সঙ্গে থাকবেন, তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দু'জন প্রাপ্তবয়স্কের জীবন ও স্বাধীনতা বা পছন্দের স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়টি কোনও মামলায় বিচারাধীন ছিল না। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, 'আমরা জানাচ্ছি যে নুরজাহান এবং প্রিয়াংশী (মামলায়) রায়ে ভালো আইন তুলে ধরছে না।’
আবেদনকারীদের হাইস্কুলের শংসাপত্র বিবেচনা করে হাইকোর্ট জানায়, দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছেন। সেটা নিয়ে যেহেতু বিতর্ক নেই, তাই এক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তি নেই। কারণ নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকবেন বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, হিন্দু ও মুসলিম হিসেবে দুই আবেদনকারীকে দেখছে না আদালত। বরং তাঁদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখা হচ্ছে। যাঁরা নিজেদের ইচ্ছা এবং পছন্দের ভিত্তিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণভাবে থাকছেন।