খরচে রাশ টানতে পারে গ্রাহকরা। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছিল আইটি সংস্থা Accenture। এরপরেই পতন হয়েছে তাদের শেয়ার দরে। মার্কিন মুলুকের বাজারে গত ৫ দিনে প্রায় ৭.৬৯% হ্রাস পেয়েছে সংস্থার শেয়ার দর। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত ৫ সেশনে ভারতীয় শেয়ার বাজারেও আইটির গ্রাফ নিম্নমুখী।
নিফটি আইটি সূচক চলতি বছরে প্রায় ২৬% কমেছে। সেনসেক্সের বৃদ্ধি সত্ত্বেও গত পাঁচদিনে TCS, উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো সংস্থাগুলির শেয়ারের দর কিঞ্চিৎ নিম্নমুখী হয়েছে।
মহামারী পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে আইটি বুম হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই বিপুল বাজার আর নেই। চাহিদা এখন অনেকটা স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে এসেছে। সেই কারণে বড়, দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে সংস্থাগুলি ব্যয় কমাচ্ছে। বরং এমন প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যাতে বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত রিটার্ন মেলে।
চলতি মাসের শুরুর দিকেই HCL Tech-ও তাদের আয় হ্রাসের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল। কিছু সেক্টরে ব্যয় হ্রাসের কারণে এমনটা হতে পারে বলে জানিয়েছিল সংস্থা। গত মাসে কগনিজেন্টও বছরে তাদের আয় এবং মুনাফার পূর্বাভাস হ্রাস করেছে। আগের তুলনায় খরচ বৃদ্ধি এবং এবং কিছু চুক্তিতে 'পুলব্যাকে'র উল্লেখ করেছে তারা।
Accenture-এর আগামীর পূর্বাভাস দূর্বল হতে পারে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সংস্থাই গত ৩০ নভেম্বর শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি আয় করেছে। সেলস ৫% বেড়ে ১৫.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবুও পরিস্থিতি এতটা বদলে যাবে বলে কেন মনে করছে সংস্থা? কগনিজ্যান্টের মতো তারাও 'ক্লায়েন্টদের পুলব্যাক'-কেই (অর্থাৎ লগ্নিকারীদের পিছু হটা) দায়ী করছে।
প্রথম ত্রৈমাসিকে Accenture-এর নতুন বুকিংয়ের অঙ্ক ছিল $১৬.২২ বিলিয়ন। এটি প্রায় ৩% পতন। ব্রোকারেজ সংস্থা মতিলাল ওসওয়াল তাদের একটি নোটে বলেছে, Accenture-এর দুর্বল বুকিং ভারতীয় IT-র বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।
অন্যদিকে, 'অ্যাট্রিশন এবং অ্যাকসেঞ্চারের মার্জিন গাইডেন্সে একটি 700 bps উন্নতি হয়েছে। এটি ভারতীয় আইটি শিল্পের জোগান ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী মুনাফার ইঙ্গিতবাহী। আমরা আইটি সেক্টর নিয়ে আমাদের ইতিবাচক অবস্থান বজায় রাখছি। মধ্যমেয়াদী ভালো চাহিদা এবং শক্তিশালী মার্জিন পুনরুদ্ধারের আশা করা হচ্ছে,' উল্লেখ করেছে ব্রোকারেজ সংস্থা।
পোস্ট আর্নিং আলোচনা Accenture CFO KC McClure বলেন, 'অ্যাট্রিশন ১৩%-এ নেমে এসেছে। অ্যাট্রিশনের একটি কাঠামোগত প্যাটার্ন আছে। সাধারণত Q4 থেকে Q1-এ অ্যাট্রিশনের হার নেমে আসে। এই বছর এটি আরও এক ধাপ নিচে নেমে এসেছে। সেটি নিয়ে আমরা সত্যিই খুশি। এর অর্থ হল আমাদের প্রতিস্থাপন ভিত্তিতে কম নিয়োগ করতে হচ্ছে। এর অর্থ নিয়োগের খরচ কমছে।'
যে কোনও আইটি সংস্থার মূল ভিত্তি হল কর্মীরা। মহামারী পরিস্থিতিতে আইটি ক্ষেত্রে চারদিকে পুঁজির ঢেউ ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে পছন্দের প্রোজেক্ট, লোকেশন ও বেতনের খোঁজে হরদম চাকরি সুইচ করছিলেন কর্মীরা। কিন্তু সেই বিপুল বিনিয়োগের ঢেউ এখন স্তিমিত। এক-দুই ধাপ বেতন বৃদ্ধির পর এখন কিছুটা থিতু হয়ে এক স্থানে চাকরি করাতে মনোনিবেশ করেছেন কর্মীরা। ফলস্বরূপ কমছে অ্যাট্রিশন রেট।
এটি সংস্থাগুলির জন্য ইতিবাচক। কারণ অ্যাট্রিশন রেট বেশি থাকা মানেই নয়া কর্মী নিয়োগ করা। এক-একজন কর্মী খুঁজতে ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্থাগুলির মোটা টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি নতুন কর্মীদের প্রকল্পে প্রবেশ করানো, বেতন স্থির করা ইত্যাদিতেও খরচ হয়। জয়েনিং বোনাস থাকলে তো কথাই নেই।
অ্যাট্রিশন রেট বেশি থাকলে সংস্থাগুলিকে বেতনও অতিরিক্ত হারে দিতে হয়। বেতন বেশি না হলে কর্মীরা জয়েন করতে চান না। তাছাড়া কর্মীদের ধরে রাখতে তাদের বেতনও নিয়মিত বৃদ্ধি করতে হয়। ফলে এগুলির কারণে সংস্থার কার্যত টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। অ্যাট্রিশন রেট কমায় তাই সেই বাড়তি খরচের বোঝা কমছে তাদের।
মতিলাল ওসওয়ালের পছন্দের আইটি সংস্থার তালিকায় টিসিএস, এইচসিএল টেক, এবং ইনফোসিস বজায় রয়েছে। ফলে স্বল্প মেয়াদে আইটি শেয়ারগুলি নিম্নমুখী হলেও সংস্থাগুলি সাময়িক প্রভাব কাটিয়ে উঠবে। দীর্ঘমেয়াদে তাই এই শেয়ারগুলির বিষয়ে এখনও ইতিবাচক বিশেষজ্ঞরা।
বিঃ দ্রঃ- শেয়ার বাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি বাজার পর্যবেক্ষণ ও আপডেট মাত্র। এগুলি স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। সম্পাদকীয় বিনিয়োগ সুপারিশ নয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। বিনিয়োগের আগে সমস্ত দিক অবশ্যই খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিন।