কেরলের শবরীমালা মন্দিরের ‘হারানো সোনা’ ঘিরে এখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই আবহে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন প্রাক্তন ‘কিংফিশার’-কর্তা বিজয় মাল্য। কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে নাম জড়ানোর আগে, দেশ ছেড়ে পালানোর আগে দানধ্যানের জন্য বেশ নামডাক ছিল তাঁর। একটা সময় ছিল যখন ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বিজয় মাল্য প্রতি বছর ৪১ দিনের কঠোর ব্রত পালন করে শবরীমালা মন্দিরে যেতেন।
শবরীমালা মন্দির ও বিজয় মাল্য
কেরলের শবরীমালা মন্দিরে তাঁর দান করা বিপুল পরিমাণ সোনা চুরি যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে এই মুহূর্তে তপ্ত কেরলের রাজনীতি। দেশত্যাগী হওয়ার আগে শবরীমালা আয়াপ্পনের মন্দিরে নিয়মিত আনাগোনা ছিল মাল্যর। আয়াপ্পনের বড় ভক্ত ছিলেন তিনি। ফি বছর কেরলের শবরীমালা মন্দিরে যেতেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯৮ সালে কোটি কোটি টাকার সোনা দান করেছিলেন বিজয় মাল্য। সেই সোনা স্থান পায় মন্দিরের গর্ভগৃহে। ১৯৯৮-'৯৯ সালের মধ্যে প্রায় ৩০.৩ কেজি সোনা এবং ১,৯০০ কেজি তামা দান করেন মাল্য, যার দ্বারা মুড়ে দেওয়া হয় দ্বারপালকের মূর্তিগুলি। পরের বছর আরও ৮০০ গ্রাম সোনা যোগ হয় দরজার আবরণে।পাশাপাশি, বেঙ্গালুরুর ব্যবসায়ী ঊন্নিকৃষ্ণ পোট্টিও দ্বারপালকের মূর্তিগুলি সোনায় মুড়তে দান করেছিলেন। আটটি পাতে মোট ৪ কেজি সোনা বসানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছর পর, বর্তমানে সেই সোনা চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। জানা যাচ্ছে, ১৯৯৮-’৯৯ সালে মাল্য যে সোনা দান করেছিলেন, তার একটি অংশই রহস্যজনক ভাবে তামায় পরিণত হয়েছে। তদন্তের পর, কেরল হাইকোর্ট মন্দিরের ৩২ কেজি সোনা এবং ১,৯০০ কেজি তামার অনুদান অনুমোদন করে, ১৯৯৮ সালে এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই শবরীমালা মন্দিরে দ্বারপালক দেবমূর্তি ও দরজার সোনার আবরণ খোলা হয় এবং ওজন করা হয় ৪২.৮ কিলোগ্রাম। পরের দিন ২০ জুলাই, ওই সোনার পাতঢাকা দরজা পাঠানো হয়েছিল চেন্নাইয়ের স্মার্ট ক্রিয়েশনস নামের সংস্থায়, যারা ইলেক্ট্রোপ্লেটিংয়ের কাজ করার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, চেন্নাই পৌঁছতে সময় লাগে ৩৯ দিন। ২৯ অগস্ট পৌঁছনোর পর সংস্থা জানায়, দরজার ওজন নেমে এসেছে ৩৮.২৫ কিলোগ্রামে, অর্থাৎ প্রায় ৪.৫৪ কিলো সোনা উধাও। তদন্তে উঠে এসেছে, দরজাগুলি সরাসরি চেন্নাইয়ে না গিয়ে ঘুরেছে একাধিক জায়গায়। কোত্তায়মের এক ব্যক্তিগত মন্দিরে, অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু মন্দিরে, বেঙ্গালুরুর শ্রীরামপুরমের আয়াপ্পা মন্দিরে, এমনকী অভিনেতা জয়রামের বাড়িতেও একটি ব্যক্তিগত পুজোয় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দরজার প্যানেলগুলি।
ইতিমধ্যে কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি ও কে ভি জয়কুমারের বেঞ্চ মামলাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাভানকোর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি)-এর ভিজিল্যান্স অফিসারকে সমস্ত নথি জব্দ করে সিল করা রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে এডিজিপি এইচ ভেঙ্কটেশের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করেছে। বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলি অভিযোগ তুলেছে, এটি দেবস্বম বোর্ডের ভিতরে 'চূড়ান্ত দুর্নীতি ও সোনা চুরির' প্রমাণ। কেরলের নানা প্রান্তে বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। কোঝিকোড়ে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের নেতৃত্বে বিক্ষোভে পুলিশের জলকামান ও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হয়। সুরেন্দ্রন বলেন, 'তিরুবনন্তপুরমের সোনা পাচার কাণ্ডের মতো এখানেও কোটি টাকার সোনা লোপাট হয়েছে। এবার দেবস্বম বোর্ডের সম্পদ লুট হচ্ছে। আমরা চাই, তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে হোক।' অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার কাউকে রেয়াত করবে না। তাঁর কথায়, 'আমরা কখনই কোনও অপরাধীকে রেয়াত করব না। দোষী যেই হোক না কেন, সরকারের অবস্থান হল পক্ষপাতহীনভাবে ব্যবস্থা নেওয়া।