বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে ঢাকা হাই কোর্টে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামানও জানিয়েছেন, তারা বর্তানে ইকনকে একটি কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করছে। এই আবহে এবার বাংলাদেশে ইসকনের একটি অফিস জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। বাংলাদেশের ঢাকা ডিভিশনের মাদারিহাট জেলার শিবচর উপজেলায় ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, শিবচরের টিএনটি মোড় এলাকায় অবস্থিত ইসকন অফিসটিকে বলপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়। অফিসের সামনে থেকে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রভুপাদের ছবি সহ বোর্ডটি নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে থাকা ভক্তদের নাকি সেনার গাড়িতে করে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। (আরও পড়ুন: চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারি ইস্যুতে মোদীকে চিঠি ৬৮ জন প্রাক্তন বিচারপতি, IAS-IPSদের)
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এরপর থেকেই সেখানে দফায় দফায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হমলার অভিযোগ উঠেছে। এরই মাঝে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে মামলার আবেদন দায়ের হয় ঢাকা হাই কোর্টে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুগামীদের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি ফারহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশিস রায় চৌধুরীর এজসালে মামলাটি শোনা হচ্ছে।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে ইতিমধ্যেই মহম্মদ ইউনুসের সরকারকে বার্তা দিয়েছে ইসকন বাংলাদেশ। এই নিয়ে দু'টি পৃথক বিবৃতি জারি করে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং সরকারের প্রতি নিজেদের দাবি তুলে ধরেছে ইসকন। এই আবহে ইসকনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'আমরা ধারাবাহিক ভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন করেছি যাতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়। আমরা চাই যাতে সরকার এবং প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করে সনাতনীদের উদ্বেগ মেটায়। বাংলাদেশ আমাদের জন্মস্থান। আমরা এই দেশের গর্বিত নাগরিক। আমাদের অনেক আচার্য্যদের জন্ম এই দেশে। আমরা চাই সরকার যাতে এই দেশের প্রতিটি নাগিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখে। আমরা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের যেকোনও সরকারের সঙ্গেই সমন্বয় বজায় রাখতে চাই। আমারা চাই যাতে সবাই সব ধর্মের প্রতি সহনশীল হন এবং যে কোনও ধরনের উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।'
এরপর অপর এক বিবৃতিতে চিন্ময় প্রভু ইস্যুতে ইসকন বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়, 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করছি আমরা এবং বর্মান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে চাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সনাতনীদের বিরুদ্ধে যে হামলা চলছে আমরা সেই সব ঘটনারও নিন্দা করছি। আমরা চাই যাতে সরকার সনাতনীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। 'বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটে'র প্রতিনিধি এবং একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রথম থেকেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন। তাঁর বাকস্বাধীনতার বিষয়টি বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। তিনি অন্যদের অধিকারের জন্যে মনে যে বল যোগাচ্ছেন, তা সমর্থন করা খুবই প্রয়োজন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং এদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের বিচার প্রাপ্য। সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনও ধরনের বৈষম্য আর মেনে নেওয়া হবে না।'
ইসকনের তরফ থেকে আরও বলা হয়, 'সরকারের প্রতি আমাদের দাবি - সনাতনীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সাজা দিতে হবে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। দেশের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে যাতে শান্তি বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে। বাংলাদেশের এক সনাতনী সংগঠন হওয়ার দরুণ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষা করার বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।'