হামাসের হাতে গাজায় ৪৭১ দিন বন্দি থাকার পর নিজের দেশে ফিরলেন তিন ইজরায়েলি। ১৯ জানুয়ারি গাজায় পূর্বনির্ধারিত সময়ের থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে কার্যকর হয়েছিল যুদ্ধবিরতি। এই আবহে তিনজন ইজরায়েলি বন্দিকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করে প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী। হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই এএফপিকে বলেন, ইজরায়েলে ফেরার আগে বন্দিদের সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা সিটির রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো তেল আবিবে প্রতিরক্ষা সদর দফতরের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়। সেখানে দেখা যায়, তিন নারী বন্দিকে হামাসের একটি গাড়ি করে নিয়ে আসা হয় এবং তা থেকে তাঁরা বের হচ্ছেন। এরপর রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির গাড়িতে উঠছেন তাঁরা। সেই সময় হাজার হাজার ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা দফতর চত্বরে উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। অনেকে কেঁদেও ফেলেন। (আরও পড়ুন: দায়িত্ব নিয়েই ২০০ অর্ডারে সই, সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প)
জানা গিয়েছে, হামাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ইজরায়েলি বন্দিরা হলেন - নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহৃত রোমি গোনেন (২৪) এবং কিব্বুটজ কাফার আজা থেকে অপহৃত এমিলি দামারি (২৮) ও ডোরন স্টেইনব্রেচার (৩১)। হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া তিন বন্দি প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা করবে ইজরায়েলি বাহিনী। এই নিয়ে প্রতিরক্ষা দফতর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, 'মুক্তি পাওয়া তিন বন্দি ইজরায়েলি ভূখণ্ডে ফেরার পর ইজরায়েলি ডিফেন্সফোর্সের বিশেষ একটি দল এবং আইএসএ বাহিনী তাঁদের নিয়ে যাবে। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং শারীরিক পরীক্ষা করা হবে।'
অপরদিকে ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তির পর প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে ইজরায়েল। ইজলায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একাধিক বাস। এই আবহে হামাস জানায়, ৩ ইজরায়েলিকে মুক্তির বিনিময়ে ৬৯ জন নারী এবং ২১ জন প্যালেস্তিনীয় কিশোরকে মুক্তি দিয়েছে ইজরায়েল। এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর পরই গাজায় প্রবেশ করে ৬৩০টি ত্রাণ বহনকারী ট্রাক।
উল্লেখ্য, এর আগে কাতারের দোহায় দীর্ঘ ৯৬ ঘণ্টার আলোচনার পরে এই যুদ্ধবিরতির জন্যে ইজরায়েল এবং হামাসকে রাজি করানো হয়। প্রাথমিক ভাবে ৬ সপ্তাহ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এরপর ১৭ জানুয়ারি হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে ইজরায়েলের নেতানিয়াহুর সরকার। সেদিন ছয় ঘণ্টারও বেশি আলোচনার পরে শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতির পক্ষে সায় দেয় ইজরায়েলি ক্যাবিনেট। এদিকে ক্যাবিনেট বৈঠকে অতি ডানপন্থী কয়েকজন মন্ত্রী এই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দেন। তবে সব মিলিয়ে নেতানিয়াহুর ক্যাবিনেটের ২৪ জন সদস্য এই যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেন এবং তাতে অনুমোদন পায় সেটি। উল্লেখ্য, এখনও গাজায় প্রায় ৯০ জনের বেশি ইজরায়েলি বন্দি আছে হামাসের হাতে। যদিও তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।