আয়করের ক্ষেত্রে বড় কিছু বদল এসেছে এবারের বাজেটে। আয়করের স্ল্যাবের হার কমানো বা ৮০সি ধারার অধীনে কর ছাড়ের হার বৃদ্ধি নিয়ে আশা থাকলেও আশাহত হয়েছেন মধ্যবিত্ত। তবে এরই মধ্যে গতকাল বাজেটে আয়কর নিয়ে বেশ কয়েকটি নয়া নিয়ম চালুর ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
বাজেট ঘোষণায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানান, একজন ব্যক্তিকে ট্যাক্স দায়বদ্ধতার উপর অঙ্ক কষে সারচার্জ দিতে হবে এবং করযোগ্য আয় ৫০ লাখের বেশি হলে তাদের বেস ট্যাক্স দায়বদ্ধতার উপরে তা ধার্য হবে। যে হারে সারচার্জ দিতে হবে তা করদাতার আয়ের স্ল্যাবের উপর ভিত্তি করে ধার্য হবে। আয়ের স্ল্যাব বেশি হলে সারচার্জের হার বেশি হবে। বর্তমানে করদাতার আয়ের অন্তর্ভুক্ত তালিকাভুক্ত শেয়ার এবং ইক্যুইটি ভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের উপর সারচার্জ সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি যদি আয়করদাতা তাঁর অন্যান্য আয়ের উপর উচ্চ হারে সারচার্জ দেন তাহলেও দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের উপর সারচার্জ সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশই ধার্য করা হয়।
এদিকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মা-বাবা বা অভিভাবকরা বিমার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, অভিভাবকের মৃত্যুর পরই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি বিমার অর্থ পান। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এমন হতে পারে যেখানে অভিভাবক জীবিত থাকাকালীনই বিমা অর্থের প্রয়োজন পড়তে পারে। সেই ক্ষেত্রে অভিভাবকের বয়স যদি ৬০ বছর পার করে যায়, তাহলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা ওই অর্থ পেতে পারেন। তেব এই ক্ষেত্রে আয়করে পাওয়া ছাড় ফিরিয়ে দিতে হত। বা অভিভাবক বা পিতামাতার আগে যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে, তাহলেও কর ছাড়ের সুবিধা ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এবার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির বাবা-মায়ের জন্য ট্যাক্সে ছাড়ের ঘওষণা করা হল।
সরকার ২০২১ সালের ৬ জুনে কোভিডের চিকিৎসার জন্য খরচের জন্য প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি কোভিডের কারণে ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের প্রাপ্ত অনুগ্রহের বিষয়ে কিছু সুবিধা ঘোষণা করেছিল। আইন সংশোধন করে এই সুবিধাটিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জারি রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। কাজেই কোভিড চিকিত্সার জন্য পাওয়া অর্থ করমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি করোনায় মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির পরিবার কোনও টাকা পেলে তার উপরও আয়কর ধার্য করা হবে না।
পাশাপাশি আয়কর রিটার্নে সময় ভুল হয়ে থাকলে তা শোধরানোর জন্য করদাতাদের বাড়তি সময় দেওয়া হবে এই অর্থবর্ষ থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ থেকে করদাতারা সংশ্লিষ্ট অ্যাসেসমেন্ট ইয়ারের দু'বছরের মধ্যে সংশোধিত রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন। এতে মামলার জটিলতা কমবে।
এদিকে এবার থেকে ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পত্তির উপর কর বসবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে আয় হলে তার উপর ৩০ শতাংশ কর বসবে। কেউ যদি অন্য কাউকে ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পত্তি উপহার দেন, তাহলে উপহার গ্রহণকারীকে কর প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সীমার উপরে ক্রিপ্টো সম্পত্তি লেনদেনের জন্য যে অর্থ খরচ করা হবে, তার উপরও ১ শতাংশ হারে টিডিএস বসবে।
পাশাপাশি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের জন্য কর ছাড়ে সমতা আনলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। রাজ্য কর্মীদের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমে ট্যাক্স ডিডাকশনের সীমা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৪ শতাংশ করা হচ্ছে।