ইতালির কুখ্য়াত 'এনড্রাংঘেটা মাফিয়া গ্যাং' (Ndrangheta Mafia Gang)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৫৭ বছরের এক সন্ন্যাসিনীকে গ্রেফতার করল সেদেশের পুলিশ।
রয়টার্স সূত্রে খবর, ওই সন্ন্যাসিনী সংশোধনাগারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বস্তুত, সেই অবদানের জন্যই তিনি সকলের কাছে এত দিন ধরে সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু, এখন শোনা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে উত্তরের ব্রেসার শহরের ওই মাফিয়া গ্যাংয়ের সম্পর্ক রয়েছে!
রয়টার্স সূত্রেই জানা গিয়েছে, ধৃত ওই সন্ন্যাসিনীর নাম সিস্টার অ্যানা দোনেল্লি। তিনি মিলানের স্যান ভিত্তোরে সংশোধনাগারের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতেন।
পুলিশের অনুমান, সেবার অছিলায় তিনি আসলে ওই মাফিয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে জেলবন্দি অপরাধীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের কাজ করতেন! প্রসঙ্গত, এই কারাগারে ওই মাফিয়া গ্যাংয়েরও অনেক সদস্য বন্দি রয়েছে। তাদের কাছেও গ্যাংয়ের খবর পৌঁছে দিতেন সিস্টার অ্যানা।
অথচ, এতদিন কেউ তাঁকে কোনও কুকর্মের জন্য সন্দেহ করেনি। বস্তুত, মিলানের ওই এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং সকলের শ্রদ্ধার পাত্রী ছিলেন। এমনকী, সমাজের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য সম্প্রতি তাঁকে 'গোল্ডেন প্যানেত্তোনে' সম্মান প্রদান করা হয়। যা হল - মিলানের বার্ষিক নাগরিক সম্মাননা।
বিষয়টি নিয়ে সিস্টার অ্যানার কী বক্তব্য, সেটা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। কারণ, সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে, এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকার দুই রাজনীতিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং অভিযান চালিয়ে মোট ১.৮ মিলিয়ন ইউরো (১.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু, কাদের পাকড়াও করতে এই অভিযান চালানো হয়েছিল, সেই ব্যক্তিদের নাম পুলিশের তরফে প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
পুলিশের অনুমান, মাফিয়া যোগ থাকার পাশাপাশি ধৃতরা আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই যুক্ত ছিল। যেমন - টাকার বিনিময়ে মানুষের ভোট কেনা, বেআইনি অস্ত্র মজুত করা, হাওলার মাধ্যমে টাকা পাচার, বেআইনিভাবে সুদে ঋণ দেওয়ার কারবার, মাদক পাচার এবং ভুয়ো চালান কাটা ইত্যাদি।
'এনড্রাংঘেটা মাফিয়া গ্যাং' কী?
কুখ্যাত এই মাফিয়া গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল, তারা প্রায় ১২ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের চালান ইস্যু করেছিল। কিন্তু, যে লেনদেন দেখিয়ে ওই চালান কাটা হয়েছিল, তা আসলে ভুয়ো! কারণ, কখনও ওই লেনদেন বাস্তবে ঘটেইনি।
আসলে অসাধু শিল্পপতিরা যাতে কর ফাঁকি দিতে পারে, তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এভাবে ভুয়ো চালান দেখিয়ে ওই শিল্পপতিরা নিজেদের আয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেখাতেন। যার জেরে তাঁদের অনেক কম পরিমাণে আয়কর দিতে হত। আর এই অনিয়ম করার বিনিময়ে মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্যরা ওই শিল্পপতিদের কাছ থেকে মোটা কমিশন পেত।