শিয়ালের আতঙ্কে থরহরিকম্প বাংলাদেশের দিনাজপুর সদর উপজেলার উথরাইল ইউনিয়নের রামপুর বেঙ্গরদিঘি এলাকার বাসিন্দারা। তার উপর সরকারি হাসপাতালে শিয়ালের কামড়ের প্রতিষেধক না মেলায় বিপাকে পড়েছেন আক্রান্তরা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেঙ্গরদিঘি এলাকার অন্তত ১৪ জনকে কামড়ে ঘায়েল করেছে শিয়াল। যার মধ্যে অনেকেরই আঘাত গুরুতর। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ৩৮ বছরের পূর্ণিমা রানি রায়।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বুধবার সন্ধে নাগাদ বাড়ির কাছেই একটি পুকুরের পাড় থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছিলেন পূর্ণিমা। সেই সময়েই একটি শিয়াল একটি ছাগলকে তাড়া করে ছুটে আসে। শিয়ালের তাড়া খেয়ে পুকুরে পড়ে যায় ছাগলটি।
পূর্ণিমার দাবি, এরপর ওই শিয়ালটি তাঁর উপরেও হামলা চালায়। তাঁর দু'হাত থেকে মাংস খুবলে নেয়! ভয়ে এবং যন্ত্রণায় সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান পূর্ণিমা। পরে তাঁকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর হাতের ক্ষত পরিষ্কার করে চিকিৎসকরা সেখানে ব্যান্ডজ বেঁধে দেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, পূর্ণিমা ছাড়াও ওই এলাকায় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছেন মানিক রায় (৩৫), বকুল রায়-সহ (১৭) আরও অন্তত ১৩ জন। আহতদের মধ্যে চারজন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্কের টিকা (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন) নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু, গুরুতর আহত হওয়ায় হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন পূর্ণিমা।
অন্যদিকে, মানিক রায় জানিয়েছেন, শিয়াল তাঁর মুখে কামড় বসিয়েছে! যার ফলে ঠোঁটের এক পাশ ছিঁড়ে গেছে তাঁর। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পাশের গ্রাম থেকে নিমন্ত্রণ খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
সেই সময়েই মানিক ও তাঁর দুই মেয়ের উপর হামলা চালায় শিয়াল। তবে, তাতে তাঁর দুই মেয়ের কোনও ক্ষতি না হলেও তিনি গুরুতর জখম হন। মানিকের অভিযোগ, এই ঘটনার পর হাসপাতালে গেলেও বিশেষ লাভ হয়নি।
কারণ, হাসপাতাল থেকে আক্রান্তদের বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে না। ফলত, গাঁটের কড়ি খরচ করে ইনজেকশন কিনতে হচ্ছে। মানিক জানিয়েছেন, শিয়ালের কামড় খাওয়ার পর সুস্থ হতে ৩,০০০ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা) খরচ করে তিনটি ইনজেকশন নিতে হয়েছে তাঁকে।
এই প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য আধিকারিক পারভেজ সোহেল রানা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কুকুর, শিয়াল কিংবা বিড়াল কামড়ালে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়।
ক্যাটাগরি-১ স্তরের ক্ষত হলে সাধারণত ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয় না। ক্যাটাগরি-২-এর ক্ষেত্রে এআরভি টিকা (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন) দেওয়া হয়। এবং ক্যাটাগরি-৩-এর ক্ষেত্রে এআরভি ও আরআইজি (র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন) ভ্যাকসিন দিতে হয়।
পারভেজ সোহেল রানা জানান, তাঁদের হাসপাতালে এআরভি ভ্যাকসিনের সরবরাহ বজায় থাকলেও আরআইজি ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। অথচ, আক্রান্তদের অধিকাংশের ক্ষতই ক্যাটাগরি-৩ পর্যায়ের। ফলত, হাসপাতালে এসেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পরিষেবা সহজে পাচ্ছেন না আক্রান্তরা।