শিশির গুপ্ত
পাকিস্তানের হ্যান্ডেলারের থেকে নির্দেশ এসেছিল। তার ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়-সহ নয়াদিল্লির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেকি চালিয়েছিল এক জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি। করা হয়েছিল ভিডিয়ো। ওই ধৃত জঙ্গিকে জেরার পর এমনই তথ্য উঠে এসেছিল বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা।
২০১৬ সালে সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং ২০১৯ সালের বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নিশানায় আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। যিনি ভারতের অন্যতম সুরক্ষিত ব্যক্তি। নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে সম্ভাব্য ঝুঁকি আছে, সে বিষয়ে সুরক্ষা সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।
দিল্লি এবং শ্রীনগরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের অন্ততনাগ থেকে জইশ জঙ্গি হিদায়ত-উল্লাহ মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জইশের গোষ্ঠী লস্কর-ই-মুস্তাফার দায়িত্বে ছিল মালিক। যে আদতে শোপিয়ানের বাসিন্দা। মালিক তদন্তকারীদের জানিয়েছে যে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-সহ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভিডিয়ো রেকর্ডের জন্য ২০১৯ সালের ২৪ মে শ্রীনগর থেকে ইন্ডিগোর বিমানে করে নয়াদিল্লি এসেছিল। তারপর হোয়্যাটসঅ্যাপের মাধ্যমে সেই ভিডিয়ো পাকিস্তানের হ্যান্ডেলারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। যে হ্যান্ডেলারকে ‘ডক্টর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মালিক। ভিডিয়োর পর বাসে করে কাশ্মীরে ফিরে গিয়েছিল। এমনকী জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশকে মালিক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে সমীর আহমের দারের সঙ্গে সাম্মা সেক্টরের পাকিস্তান সীমান্তের রেকি চালিয়েছিল। সেই বছরের পুলওয়ামা হানায় জড়িত থাকার অভিযোগে যে দারকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর হাতে যে তথ্য এসেছে, সেই মোতাবেক গত বছরের মে'তে আত্মঘাতী হামলার জন্য মালিককে হুন্ডাই স্যান্ট্রো গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। সে বছরের নভেম্বরে শোপিয়ানে জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাঙ্কের নগদ অর্থের গাড়ি থেকে ৬০ লাখ টাকা লুট করার কথা স্বীকার করেছে মালিক। তার সঙ্গে ছিল তিন জইশ জঙ্গি - ইরফান ঠোকার, উমর মুস্তাক এবং রেইস মুস্তাফা। একইসঙ্গে হ্যান্ডলার-সহ পাকিস্তানের ১০ জনের নাম, কোড নেম এবং ফোন নম্বর ফাঁস করে দিয়েছে। সুরক্ষা এজেন্সির হাতে সেই তথ্য ইতিমধ্যে তুলে দিয়েছে পুলিশ। পরে শোপিয়ান এবং সোপোরে মালিকের দুই সঙ্গীকে খতম করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, কীভাবে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই হিজবুল মুজাহিদিনের যোগ দিয়েছিল, সে বিষয়েও তদন্তকারীদের জানিয়েছে মালিক। সে জানিয়েছে, পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে যোগ দিয়েছিল এবং অগস্টে একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিল। এমনিতেই জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের সঙ্গে ডোভালের বিশেষ 'যোগ' আছে। ১৯৯৪ সালে গ্রেফতারির পর আজহারকে জেরা করেছিলেন তৎকালীন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর যুগ্ম-অধিকর্তা ডোভাল। ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সলের আইসি-৮১৪ হাইজ্যাক কাণ্ডে আজহারকে কান্দাহার বিমানবন্দরে এসকর্ট করে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই।