সুরজিত সিং
তখন তাঁর বয়স মাত্র ৬ বছর। সালটা ১৯৪৭। নিজের পরিবারের ২২ জনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন মোহন সিং। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মোহনের পরিবারের সদস্যরা। তখন তাঁরা পাকিস্তানের এক গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে নিজেদের সম্মান বাঁচানোর জন্য যখন গ্রামের সব মহিলারা কুয়োতে ঝাঁপাচ্ছিলেন, সেই সময় মোহন সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর মোহন পাকিস্তানের এক মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। গত ৭৫ বছর ধরে নিজের অন্য কোনও পরিবারের সদস্যের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। তবে দীর্ঘ ৭৫ বছর পর ফের একবার নিজের পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে দেখা হবে মোহনের। মোহনের ৯২ বছর বয়সি কাকা বর্তমানে জলন্ধরে থাকেন। করতারপুরে মোহন আর তাঁর কাকা সারওয়ান সিংয়ের সাক্ষাত হবে।
সারওয়ান সিংয়ের বাবা, দুই দাদা এবং দুই বোন প্রাণ হারিয়েছিলেন দেশভাগের সময়। সেই মর্মান্তিক রক্তবন্যার পর ৭৫টা বছর পার হয়েছে। ৯২ বছরের সারওয়ান এবার নিজের দাদার ছেলের সঙ্গে দেখা করবেন করতারপুরে। সারওয়ানের মেয়ে রচপাল কউর তাঁর সঙ্গে যাবেন করতারপুরে। রচপাল বলেন, ‘দাঙ্গা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর থেকেই আমাদের পরিবারের সদস্যরা মোহনকে খুঁজছিল। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
কিন্তু কীভাবে ৭৫ বছর পর ফের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত হবে মোহনের? অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত গুরুদেব সিং এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। মোহন এবং সারওয়ানের দেশভাগের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন গুরুদেব। সুখদীপ সিং বার্নাল নামক এক লেখক একটি ডকুসিরিজ বানিয়েছিলেন দেশভাগ নিয়ে। ইউটিউবে সেই ডকুসিরিজ দেখেছিলেন গুরুদেব। সেই ডকুসিরিজের একটি পর্বে সারওয়ান ছিলেন, অপর এক পর্বে ছিলেন মোহন। সেই পর্বগুলি দেখে গুরুদেব সারওয়ানের মুখে মোহনের কথা শোনেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন যে সারওয়ান মোহনের কথা বলছেন। পরে গুরুদেব সারওয়ান এবং মোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে করতারপুরে দুই জনের সাক্ষাতের আয়োজন করেন।