মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ। পর পর ২ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। টানা ২৩ দিন থাকতে হয়েছে ভেন্টিলেশনে। টানা ১৪ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছে সে। এরপরেও একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দিতে দিয়েছিল শীর্ষেন্দু শীল। আর তাতেই চোখ ধাঁধানো ফল করেছে জলপাইগুড়ির ছাত্র। আইএসসি পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সে।
জলপাইগুড়ি শহরের বর্ধিত মোহন্তপাড়ায়ৃর বাসিন্দা শীর্ষেন্দু। ২০১৮ সালে সে আইসিএসসি পাশ করে। কিন্তু সেই পরীক্ষার আগে থেকেই মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় তার। একদিন জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে সে। মেডিকেল পরীক্ষায় কিছু ধরা পড়েনি। নার্সিংহোমে ভর্তি ছিল বেশ কিছুদিন। তা সত্ত্বেও দশমের পরীক্ষায় দারুণ ফল করে সে।
কিন্তু একাদশে মাথার যন্ত্রণা আবার বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়। নভেম্বর মাসে তাকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর শিলিগুড়ির তিনটি নার্সিংহোম ঘুরে ভর্তি হয় শিলিগুড়ির স্নায়ু চিকিৎসা কেন্দ্রে। ভেন্টিলেশনে চলে যায় শীর্ষেন্দু। টানা ২৩ দিন সেভাবেই কাটে। শীর্ষেন্দুর বাবা জানান, 'শীর্ষেন্দুর মস্তিকের একটি রক্তনালী ফেটে যায়। মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হয়।'
কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরেই শরীরের একটি দিক অসাড় হয়ে যায় তার। প্রায় ৬ মাস হাসপাতালের বিছানাতেই কাটে শীর্ষেন্দুর। ফিজিওথেরাপির পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরে সে।
২০১৯ সালের মে মাসে আবার ব্যথা শুরু হয় শীর্ষেন্দুর মাথায়। এবারে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয় শীর্ষেন্দুকে। সেখানেই ফের অস্ত্রোপচার হয় শীর্ষেন্দুর মস্তিষ্কে।
কিন্তু তার মধ্যেও লড়ে গিয়েছে সে। শীর্ষেন্দুর মা জানিয়েছেন, কড়া ওষুধের জন্য বেশিক্ষণ জেগে থাকা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও যতক্ষণ জেগে থাকত, পড়াশোনা করত সে। অনলাইনে ইংরাজি ও অঙ্কের অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদকও পেয়েছে শীর্ষেন্দু। করোনা আবহে অনলাইনে আইএসসির অনলাইন টেস্টও দেয় সে। তাতেও ৯৯% নম্বর পায় শীর্ষেন্দু।
শীর্ষেন্দু জানিয়েছে, এখন অনেকটাই সুস্থ সে। 'করোনার সময়ে দেখলাম চিকিত্সকরা কেমন লড়াই করছে। আমিও একটা লড়াই শেষ করলাম। আগামিদিনে আমিও চিকিত্সক হতে চাই। মেডিকেল এন্ট্রান্সই লক্ষ্য এখন,' জানাল কৃতী ছাত্র।