কাউকে চাকরি দেওয়ার অর্থ যে তাঁকে কিনে নেওয়া নয়, বা সহকর্মীদের উপর প্রভুত্ব ফলানো নয়, সেটাই প্রমাণ করে দেখালেন জাপানের একটি সরকারি সংস্থার কর্মীরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, জাপানের ওই সরকারি সংস্থার যিনি প্রাক্তন 'বস' ছিলেন, তিনি রোজ দিনের শুরুতেই কর্মীদের সঙ্গে মিটিং করতেন। এবং তার জন্য কর্মীদের প্রতিদিন ডিউটি আওয়ার্স শুরু হওয়ার ৫ মিনিট আগে অফিসে ঢুকে যেতেই হত। এক সেকেন্ড দেরিও হওয়া বরদাস্ত করা হত না।
সূত্রের দাবি, 'বস'-এর এই অন্যায় আবদার একটানা তিন বছর ধরে সহ্য করে গিয়েছেন ওই সরকারি কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই 'বস'-এর জায়গায় আসেন নতুন একজন। শেষ হয় নিয়মিত ৫ মিনিট আগে অফিসে ঢোকার 'ফতোয়া'! কিন্তু, এবার কর্মীরা ক্ষেপে যান। জানান, টানা তিন বছর ধরে তাঁরা প্রত্যেকটি দিন নির্ধারিত সময়ে ৫ মিনিট আগে অফিসে ঢুকতে বাধ্য হয়েছেন। সেই অতিরিক্ত সময় যোগ করে যাঁর যত 'ওভারটাইম' হচ্ছে, সেই টাকা তাঁদের মিটিয়ে দিতে হবে!
বলা হচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মীরা যাতে সরব হন এবং তাঁরা যাতে এ নিয়ে মামলা রুজু করেন, সেই পরামর্শ নাকি ওই সংস্থায় যোগ দেওয়া নতুন 'বস'ই কর্মীদের দিয়েছিলেন! যার ফল স্বরূপ, সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই এবার বিরাট খেসারত দিতে হবে। মামলার ঘোষিত রায়ে জাপানের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট - এ যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুসারে - এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একটি সরকারি নির্দেশিকা। যেটি জারি করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং সেই নির্দেশিকা কার্যকর করা হয়েছিল ওই বছরেরই ১ মার্চ থেকে। জাপানের হনসু দ্বীপের গিন্নান শহরে এই নির্দেশিকা যখন জারি ও কার্যকর করা হয়, তখন সেখানকার মেয়র ছিলেন হিদেও কোজিমা।
তাঁর নির্দেশ ছিল, সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে যে অফিসে কাজ শুরু হয়, সেখানেই সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত কর্মীকে পৌঁছে যেতে হবে! যদি কেউ এই নিয়ম একদিনের জন্যও অমান্য করেন, তাহলে তাঁকে তাঁর পদ খোয়াতে হবে। এমনকী, তাঁর চাকরিও চলে যেতে পারে! অভিযোগ, টানা তিন বছর ধরে এই নিয়ম মানতে গিয়ে যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার ১৪৬ জন কর্মীকে।
এদিকে, গত বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন কোজিমা। এরপরই তাঁর তৈরি করা অদ্ভূত নিয়ম এবং জারি করা নির্দেশিকা খারিজ করে দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ করা হয় গত বছরের মার্চ মাসে। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী কর্মীরা ওভারটাইমের দাবিতে প্রথমে সরব হন এবং তারপর মামলা রুজু করেন।
সেই মামলা রুজু করা হয় 'জাপান ন্যায্য বাণিজ্য কমিশন'-এ। গত বছরের নভেম্বর মাসে সেই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ওই ভুক্তভোগী কর্মীদের ওভারটাইমের টাকা বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০.৯ মিলিয়ন ইয়েন প্রদান করতে হবে। ভারতীয় মূল্যে যার পরিমাণ প্রায় ৫৮ লক্ষ ৪১ হাজার ৪ টাকা!